কবি হুইটম্যানের কবিতায় ব্যক্তিগণতন্ত্র

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২২, ১০:০৭

আবু আফজাল সালেহ

ওয়াল্ট হুইটম্যান (মে ৩১, ১৮১৯-মার্চ ২৬, ১৮৯২) আমেরিকান কবি ও মানবতাবাদী লেখক। তিনি বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে কবিতায় একটা নতুন প্রবণতা এনেছেন। হুইটম্যান (ডধষঃ ডযরঃসধহ) সম্ভবত আমেরিকার প্রথম গণতান্ত্রিক কবি। গণতন্ত্র হচ্ছে হুইটম্যানের কবিতার প্রধানভাষা। গণতন্ত্র বিকশিত হলে মানবতার জয়ও হবে। তিনি সাধারণ আমেরিকানদের জয়গান গেয়েছেন। তার কবিতায় অবলীলায় চলে এসেছে গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ, কামার, নিগ্রো, কসাই, কৃষক, দর্জি, সাধারণ সৈন্য ইত্যাদি। সার্বজনীন এসবের মধ্যে অন্তর্নিহিত তাৎপর্য খুঁজে পেয়েছেন, গান গেয়েছেন ও ঝনঝন শব্দের অর্থ পেয়েছেন। অহফ :যধঃ ধষষ :যব সবহ বাবৎ নড়ৎহ ধৎব ধষংড় সু নৎড়ঃযবৎ/ধহফ :যব ড়িসবহ সু ংরংঃবৎং ধহফ ষড়াবৎং/ধহফ :যধঃ ধ কবষংড়হ ড়ভ :যব পৎবধঃরড়হ রং ষড়াব (ংবপঃরড়হ ৫, ঝড়হম)- কবিতাংশটি হুইটম্যানের কণ্ঠ; কবিতাংশটি হুইটম্যানের গণতন্ত্র ও আমেরিকা নিয়ে চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। 'ৃঅ নবঃঃবৎ, ভৎবংযবৎ, নঁংরবৎ ংঢ়যবৎব, ধ রিফব/ঁহঃৎরবফ ফড়সধরহ ধধিরঃং, ফবসধহফং ুড়ঁ (ঝড়হম ড়ভ গুংবষভ)'। হুইটম্যানের কবিতার ভাবনা অনেক গভীরে। গবেষক ঈড়যবহ বিশ্বাস করতেন, মুক্তকছন্দ বাছাই ও প্রয়োগ করে হুইটম্যান তার স্টাইলে গণতন্ত্র নির্মাণ করতে পেরেছেন। আমেরিকান কাব্য কী বলতে চেয়েছে, কী করতে চেয়েছে তা জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। তিনি আমেরিকান কল্পনাকে মুক্ত করতে চেয়েছেন, উন্নয়ন করতে চেয়েছেন। আমেরিকান শিল্পকলাকে সাহসী ও জাগ্রত করতে চেয়েছেন এবং সফল হয়েছেন। তার যোগ্য উত্তরাধিকারেরাও 'এটা অনুসরণ করুক' তা তিনি চেয়েছেন। ঙ ঈধঢ়ঃধরহ! গু ঈধঢ়ঃধরহ! হুইটম্যানের সর্বাধিক পরিচিত ও জনপ্রিয় কবিতা। জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক আব্রাহিম লিঙ্কনের মৃতু্যর পর তিনি এ কবিতাটি লিখেছিলেন। এ কবিতাটি তাকে আরও জনপ্রিয় ও মর্যাদাবান করে তোলে। হুইটম্যান আনুষ্ঠানিক ভাষার সঙ্গে কথপোকথন, আমেরিকানবাদ, স্স্ন্যাং-ভাষা সঙ্গে সমন্বয় বা একত্রিত করে গণতান্ত্রিক বক্তার কণ্ঠস্বর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। 'স্স্ন্যাং ল্যাঙ্গুয়েজ'কে তিনি গণতান্ত্রিক বক্তায় রূপান্তর করেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিনি মুক্তক ছন্দে দীর্ঘছত্র প্রয়োগ করেছেন। এক্ষেত্রে তার বক্তব্য টেকসই, চিন্তাশীল ও প্রজ্ঞাবান হয়েছে। কবিতার সম্পর্কে কবির সঙ্গে আমেরিকনরাও উৎসাহী, গর্বিত ও বাস্তবাদী হয়েছেন হুইটম্যান ব্যক্তিকেন্দ্রিকে বিশ্বাসী ছিলেন। ব্যক্তিগণতন্ত্র কামনা করতেন। ও ংবব ংড়সবঃযরহমং ড়ভ এড়ফ/ ঊধপয যড়ঁৎ ড়ভ ২৪ ধহফ বধপয সড়সবহঃ :যবহ/ওহ :যব ভধপবং ড়ভ সবহ ধহফ ড়িসবহ/ও ংবব এড়ফ ধহফ রহ সু ড়হি ভধপব রহ :যব মষধংং (ঝড়হম ড়ভ গুংবষভ). ব্যক্তিকেন্দ্রিক গণতন্ত্রের সৌন্দর্যে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। তিনি বিশ্বাস করতেন, অসংখ্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক গণতন্ত্র মিলেই একক একটি সত্তায় রূপ নেবে। প্রতিটি কণ্ঠস্বর এবং প্রতিটি অংশ সম্মিলিত গণতন্ত্রে সৌন্দর্য সৃষ্টি করবে। হুইটম্যান আমেরিকাকে স্বাধীনতার ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি আমেরিকা ও আমেরিকানদের সেলিব্রেট করতেন। তিনি আশাবাদীর ব্যাপারে ভালো বোধ, বিবেচনা করতেন। গণতন্ত্র হচ্ছে প্রতিনিয়ত চর্চার বিষয়। তাই কবিতায় হুইটম্যান গণতন্ত্রের (বিষয়) সুযোগ বেশি করে সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। সত্যিকারের গণতন্ত্র তার কাম্য ছিল। যার মাধ্যমে শান্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ, ধৈর্য বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করতেন। গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও বিকাশে বিজ্ঞানের অবদান অনেক বেশি বলে মনে করতেন তিনি। চধংধমব :ড় ওহফরধ গ্রন্থে এমন ভাবনার বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে। ও যবধৎ অসবৎরপধ ংরহমরহম, :যব াধৎরবফ পধৎড়ষং ও যবধৎ/ ঞযড়ংব ড়ভসবপযধহরপং.../ঞযব পধৎঢ়বহঃবৎ.../ঞযব সধংড়হ.../ঞযব নড়ধঃসধহৃ(ও ঐবধৎ অসবৎরপধ ঝরহমরহম)-এ কবিতার মতো হুইটম্যানের অন্যান্য কবিতায় আমেরিকা ও আমেরিকানদের চিত্র দেখতে পাই। সভ্য জাতির সব মানদন্ড নিয়ে কবিতায় তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে 'খবধাবং ড়ভ এৎধংং'-এর কবিতায় এ চিত্র প্রবলভাবে দেখা যায়। নতুন বিশ্বের নতুন প্রতিনিধি হুইটম্যান। নতুন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমেরিকাকে শিখরে নিয়ে যেতে চেয়েছেন তিনি। মানবজাতির মর্যাদা ও সমতায় তিনি বদ্ধপরিকর ছিলেন। মানুষের অধিকার নিয়ে কলম ধরেছেন। নারী ও পুরুষের সমতায় তিনি বিশ্বাস করতেন। তার চরম উদাহরণ কবিতায় তার এমন বক্তব্য : ও ধস :যব ঢ়ড়বঃ ড়ভ :যব ড়িসধহ :যব ংধসব ধং :যব সধহ/অহফ ও ংধু রঃ রং ধং মৎবধঃ :ড় নব ধ ড়িসধহ ধং :ড় নব ধ সধহ (খবধাবং ড়ভ এৎধংং). হুইটম্যানের আমি (ও) হচ্ছে আধুনিক মানুষের প্রতীক বা প্রতিনিধি। আমি-র মাধ্যমে কণ্ঠস্বরকে তেজস্বী করতে চেয়েছেন। ও ঐবধৎ অসবৎরপধ ঝরহমরহম কবিতায় আমেরিকার কণ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আমেরিকা ও আমেরিকানদের খাপ খাইয়ে কীভাবে আধুনিক হওয়া যায়, প্রতিষ্ঠা করা যায় ইত্যাদি কবিতায় তুলে ধরেছেন। মানুষের সত্যিকারের মর্যাদা বজায় রেখে কবিতায় ব্যক্তিগণতন্ত্র, ভাতৃত্ববোধ, সমতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি মুক্ত ও ব্যক্তি-আস্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। অসংখ্য ব্যক্তি-আস্থা বা ব্যক্তিগণতন্ত্র মিলে বিশ্বের সত্যিকারের বোঝাপড়া করা সম্ভব হবে বলে মনে করতেন তিনি। তিনি বলেন এভাবে, ও ষড়ধভব ধহফ রহারঃব সু ংড়ঁষ.../ও যধৎনড়ৎ ভড়ৎ মড়ড়ফ ড়ৎ নধফ, ও ঢ়বৎসরঃ :ড় ংঢ়বধশ ধঃ বাবৎু যধুধৎফ/ঘধঃঁৎব রিঃযড়ঁঃ পযবপশ রিঃয ড়ৎরমরহধষ বহবৎমু. এমিলি ডিকিনসনের সঙ্গে হুইটম্যানের ধ্যানধারণা, কাব্যশৈলী ও কবিতার বিষয়বস্তু প্রায় কাছাকাছি। এমিলি ডিকিনসনের পরেই তিনি আমেরিকান কবি হিসেবে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য কবিতায় তিনি কথ্যভাষা ব্যবহার করে এক গদ্যময় রূপদান করেছেন। হুইটম্যানের কবিতা আমেরিকনদের পাশাপাশি ইউরোপ ও বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তের বুদ্ধিজীবী, লেখক ও সাধারণ পাঠকদের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।