পলস্নী বাংলার রূপকার কবি জসীমউদ্‌দীন

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২২, ১০:০৬

দেলওয়ার বিন রশিদ

গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা অতি সহজভাবে ফুটিয়ে তুলে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন কবি জসীমউদ্‌দীন। বাংলার সবুজ ঐশ্বর্যের মতোই বাংলা সাহিত্যে জসীমউদ্‌দীন দেদীপ্যমান। তার কাব্যের উপকরণ তিনি লোকজীবন থেকে সংগ্রহ করেছেন। গাঁয়ের সাধারণ রাখাল ছেলে, পলস্নীবালা, চাষির বউ, জেলে-মাঝি, বেদে-বেদেনির সহজ-সরল জীবন আলেখ্য জসীমউদ্‌দীনের কবিতায় স্থান পেয়েছে। জসীমউদ্‌দীনই সার্থকভাবে তুলে ধরেছেন তার কবিতায় পলস্নীর মাঠ-ঘাট, শস্যক্ষেত, নদী-নালা বালুচর, খাল-বিল আর পলস্নীর সবুজের বিস্তৃত রূপ সুষমা। তার কাব্যে উজ্জ্বলতা পেয়েছে গাঁয়ের সাধারণ মানুষের জীবনাচরণ ও নিসর্গ প্রকৃতি। পলস্নী প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠা পলস্নীর মানুষের স্নেহপ্রীতি, আনন্দ-উচ্ছ্বাস, দুঃখ-বেদনা অতি মমতায় অবলোকন করে জসীমউদ্‌দীন নিজস্ব ভাষাশৈলীতে বাংলা সাহিত্যে তা দীপ্তমান করেন। পলস্নীর মানুষের জীবন আলেখ্য বাংলা সাহিত্যে তুলে ধরার অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তাকে 'পলস্নী কবি' বলা হয়। জসীমউদ্‌দীন গ্রামে বড় হয়েছেন, গ্রামের মানুষকে ভালোবাসতেন, গ্রামের মানুষের জীবনযাপন তাকে বেশি আকৃষ্ট করত, গ্রামের মানুষের কথা বলা, চাল-চলন সরলতা জসীমউদ্‌দীনকে কাছে টানতো, সব সময়ই গ্রামের ভালোবাসায় তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিলেন, যে কারণে তার লেখায় পলস্নীর প্রতিচ্ছবি সার্থকভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। অতি নিষ্ঠায় তিনি পলস্নীর মানুষের জীবনগাথা বিধৃত করেছেন, যে কারণে জসীমউদ্‌দীন পলস্নী কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছেন। জসীমউদ্‌দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর শহর সংলগ্ন তাম্বুলখানা গ্রামে মামার বাড়ি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়িও ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠে গোবিন্দপুর গ্রামে। কবির পিতার নাম মৌলভী আনসার উদ্দীন, মাতার নাম আমেনা খাতুন। জসীমউদ্‌দীনের পিতা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। জসীমউদ্‌দীন পিতার একমাত্র সন্তান। কম বয়সেই পিতা আনসার উদ্দীনের কাছে জসীমউদ্‌দীনের লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। জসীমউদ্‌দীন একটু বড় হওয়ার পর তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয় বাড়ির কাছেই শোভারামপুর অম্বিকা পন্ডিতের পাঠশালায়। এখানে কিছুকাল পড়ালেখা করার পরে তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয় ফরিদপুর জেলা শহরে অবস্থিত 'হিতৈষী' মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ে। সে সময় এ বিদ্যালয়ের বেশ সুনাম ছিল। পিতা আনসার উদ্দীনও হিতৈষীতে শিক্ষকতা করতেন। হিতৈষী স্কুলে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নের পর জসীমউদ্‌দীনকে ভর্তি করে দেওয়া হয় ফরিদপুর জেলা স্কুলে। এ সময় জসীমউদ্‌দীনের পাঠ্যপুস্তকের কবিতা পড়ে তারও কবিতা লেখার ইচ্ছা হয়। গ্রামের রহিম মোলস্না কবিগান রচনা করে জানতে পেরে তার কাছে ছুটে গেলেন, কবিতা লেখার বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয়, একদিন দুজনে গান রচনা পালস্না দিতে আগ্রহী হলেন। সত্যি একদিন দুজনের গান রচনার পালস্না হয়। রহিম মোলস্না জসীমউদ্‌দীনের কবি প্রতিভায় মুগ্ধ হন। তিনি জসীমউদ্‌দীনকে কবিতা লেখায় উৎসাহ দিলেন। জসীমউদ্‌দীন কবিতা লেখার চর্চা করতে থাকেন। ক্রমেই তার কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ফরিদপুর ইশান স্কুলের ক্ষিরোদ বাবু নামে একজন শিক্ষক কবিতা লিখতেন, সেই সঙ্গে কবিতার গুণগ্রাহীও ছিলেন। ক্ষিরোদ বাবু একদিন জসীমউদ্‌দীনের কবিতা শুনলেন। তার কবিত্ব প্রতিভায় তিনি অভিভূত হলেন, তাকে কাছে টেনে আদর করলেন। কবিতার বই পড়তে উপদেশ দিলেন। জসীমউদ্‌দীন কবিতা লেখায় চর্চা করতে থাকেন। নিজ জেলা স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাননি, বরং তিনি বেশ অবহেলার ভাব লক্ষ্য করেছেন। ১৯২১ সালে জসীমউদ্‌দীন জেলা স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৪ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। একই কলেজ থেকে ১৯২৯ সালে তিনি বিএ পাস করেন। বিএ পাস করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৩১ সালে তিনি বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাস করেন। জসীমউদ্‌দীন যখন দশম শ্রেণির ছাত্র, তখন তার বিখ্যাত কবিতা 'কবর' রচনা করেন। যা ১৯২৬ সালে কলেস্নাল পত্রিকার ৩য় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। কবিতাটি প্রকাশের পর পরই তিনি সব মহলে একজন প্রতিভাদীপ্ত কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার সব কবিতার মধ্যে 'কবর' কবিতাটি শ্রেষ্ঠ। এ কবিতা পড়ে ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন কবিকে লেখেন, 'দূরাগত রাখালের বংশীর ধ্বনির মতো তোমার কবিতা আমার অন্তরকে স্পর্শ করেছে। তোমার কবিতা পড়ে আমি কেঁদেছি।' কবি যখন বিএ ক্লাসের ছাত্র তখন এ 'কবর' কবিতাটি মেট্রিক ক্লাসে পাঠ্যভুক্ত করা হয়। ছাত্রাবস্থায় জসীমউদ্‌দীন গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকমুখে প্রচলিত ছড়া, শ্লোক, গীত সংগ্রহ করতে শুরু করেন। এ বিষয়ে তাকে তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন উৎসাহিত করেন। গ্রাম্য লোকগাঁথা, গীত ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য তাকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাসিক সত্তর টাকা আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন। জসীমউদ্‌দীন ১৯৩১ সাল পর্যন্ত এ কাজে নিযুক্ত ছিলেন। পরে ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেনের অধীনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রামতনু লাহিড়ী রিসার্চ অ্যাস্টিট্যান্ট হিসেবে নিযুক্তি পান এবং ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত এ পদে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৩৮ সালে জসীমউদ্‌দীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৩৯ সালে কবি জসীমউদ্‌দীন মাদারীপুরের মহসীন উদ্দীন খানের কন্যা মমতাজ বেগম মনিমালার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকারের পাবলিসিটি বিভাগে চাকরি নেন এবং ঢাকা ছেড়ে নতুন কর্মস্থল কলকাতায় গমন করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধীনে এই পদে বহাল হন। ১৯৬১ সালে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। জসীমউদ্‌দীন একজন মানবদরদি, উদার সাহিত্য সাধক, তার সৃষ্ট সাহিত্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের সুখ-দুঃখের জীবন ছবি স্বার্থকভাবে তুলে ধরেছেন। দুর্দশাগ্রস্ত অসহায় মানুষ তার সাহিত্যে পেয়েছে অতি দরদের সঙ্গে স্থান। জসীমউদ্‌দীনই অবহেলিত ও নিপীড়িত মানুষের প্রকৃত রূপকার। জসীমউদ্‌দীনের কাব্য হৃদয় ছোঁয়া, তেমনি অত্যন্ত সাবলীল ও মনোমুগ্ধকর। তার স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনীর ভাষা ও বর্ণনা অনন্য। তার লেখা গান, লোকনাট্য, ভ্রমণ কাহিনি ও শিশু সাহিত্যশৈল্পিক নৈপুণ্যে অসাধারণ ও অনন্য। জসীমউদ্‌দীনের প্রথম দুটি কাব্যগ্রন্থ 'রাখালী' (১৯২৭) ও 'নকশী কাঁথার মাঠ' পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) মন্তব্য করেন 'জসীমউদ্‌দীনের কবিতার ভাব, ভাষা ও রস সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। প্রকৃত কবির হৃদয় এই লেখকের আছে। অতি সহজ ভাষায় লেখার যাদের শক্তি নেই, এমনতর খাঁটি জিনিস তারা লিখতে পারে না।' জসীমউদ্‌দীন সম্পর্কে ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক ও সম্পাদক ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন তার অভিমত ব্যক্ত করেন, 'আমি হিন্দু, বেদ আমার নিকট পবিত্র। কিন্তু জসীমউদ্‌দীনের কবিতা বেদের চেয়েও আমার কাছে পবিত্র। কারণ, জসীমউদ্‌দীন আমার স্বর্গাদপি গরীয়সী পলস্নীগ্রামের কথা তার কাব্যে লিখেছেন।' জসীমউদ্‌দীনের অনন্য অসাধারণ সৃষ্টি সম্ভার যেমন বাংলা সাহিত্যের ভান্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ, তেমনি পাঠক হৃদয়ে তিনি অমর হয়ে রয়েছেন। তার গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: রাখালী (কবিতা-১৯৩০), ধান ক্ষেত (কবিতা- ১৯৩১), সোজন বাদিয়ার ঘাট (কাহিনি কাব্য-১৯৩৩), রঙিলা নায়ের মাঝি (গানের সংকলন-১৯৩৫), হাসু (কিশোর কবিতা-১৯৩৮), রূপবতী (কবিতা-১৯৫১), বেদের মেয়ে (লোকনাট্য- ১৯৫১), মধুমালা (লোকনাট্য-১৯৫১), বাঙ্গালীর হাসির গল্প ১ম খন্ড, শিশু সাহিত্য- ১৯৬০, ডালিম কুমার (শিশু সাহিত্য- ১৯৬০), ঠাকুর বাড়ীর আঙিনায় (স্মৃতিকথা-১৯৬১), সুচয়নী (কবিতা- ১৯৬১), সুচয়নী (কবিতা- ১৯৬১), গল্প স্বল্প (শিশু সাহিত্য- ১৯৬২), মা যে জননী কান্দে (কাহিনিকাব্য- ১৯৬৩), জীবন কথা (স্মৃতিকথা-১৯৬৪), বোবা কাহিনি (উপন্যাস-১৯৬৪), বাঙ্গালীর হাসির গল্প (২য় খন্ড, শিশু সাহিত্য-১৯৬৪), কত গল্প কত কথা (শিশু সাহিত্য- ১৯৬৭), জলের লেখন (কবিতা-১৯৬৯), ভয়াবহ সেই দিনগুলোতে (কবিতা- ১৯৭২), বউটু বাণীর দুল (উপন্যাস-১৯৯০), যমুনাবতী (কিশোর কবিতা- ২০০১) ইত্যাদি। শিশু-কিশোরদের জন্য জসীমউদ্‌দীন প্রচুর লিখেছেন। তার লেখায় শিশু-কিশোরদের মনের খোরাক সবচেয়ে বেশি ছিল। তার প্রতিটি লেখায় ছিল আন্তরিক মমতার স্পর্শ। দরদ দিয়ে শিশু-কিশোরদের জন্য সহজ-সরল ভাষায় লিখেছেন হৃদয়ছোঁয়া ছড়া, কবিতা, হাসির গল্প। ১৯৩৮ সালে শিশু-কিশোরদের ছড়া-কবিতার বই 'হাসু' কলকাতার ভারতবর্ষ প্রিন্টিং ওয়ার্কস থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। ছোটদের সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনার পাশাপাশি শিশু মনের রহস্য উপলব্ধি সূক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টিও এতে প্রতিফলিত হয়েছে। 'হাসু'র প্রতিটি ছড়া-কবিতায় শিশু-কিশোরদের হৃদয়ের উচ্ছ্বাস ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়- 'আমার বাড়ি যাইও ভোমর/বসতে দেব পিঁড়ে জলপান যে করতে দেব/শালি ধানের চিড়ে। আমার বাড়ি যাইও ভোমর/এই বরাবর পথ মৌরী ফুলের গন্ধ শুঁকে/থামিও তব রথ।' অথবা 'আলাপন' কবিতায় কবি বলছেন, 'এই খুকূটি আমায় যদি একটু আদর করে একটু ছোট কথা শোনায় ভালোবাসায় ভরে তবে আমি বেগুন গাছে টুনটুনিদের ঘরে যত নাচন ছড়িয়ে আছে আনব হরণ করে।' কিংবা 'খুকীর সম্পত্তি' ছড়ায়, 'শিউলি নামের খুকীর সনে আলাপ আমার অনেক দিনের থেকে/হাসি খুশি মিষ্টি মিশি অনেক কথা কইবে তারে ডেকে।' 'হাসু' গ্রন্থের অন্য একটি কবিতা 'মামার বাড়ি', যা খুবই পরিচিত এবং প্রিয়, 'আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যাই।' জসীমউদ্‌দীনের এমন সহজবোধ্য অনেক ছড়া-কবিতা শিশু-কিশোরদের হৃদয়ে গাঁথা রয়েছে। ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত হয় জসীমউদ্‌দীনের 'এক পয়সার বাঁশি'। এতে নিঃস্ব, রিক্ত অসহায় ও হতদরিদ্র শিশু-কিশোরদের কথা তুলে ধরেছেন। জসীমউদ্‌দীনের শিশুতোষ প্রতিটি গ্রন্থই অনন্য অসাধারণ। বাংলা ও বাঙালির প্রতিনিধিত্বকারী গ্রামীণ সমাজ ও গ্রাম-বাংলার জীবনাচরণ, লৌকিকতা, নিসর্গ প্রকৃতির বিস্তৃত সৌন্দর্য সুষমা, প্রকৃতির অন্তর্নিহিত কথকতা জসীমউদ্‌দীনই সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এবং হৃদয়স্পর্শী ভাষায় পাঠক হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছেন একমাত্র জসীমউদ্‌দীনই। যা অন্য আর কেউ পারেনি। এ কারণে জসীমউদ্‌দীন তার সৃষ্টি সাহিত্যে অমর হয়ে থাকবেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা জসীমউদ্‌দীনের কবিতায় অতি নিষ্ঠায় উঠে এসেছে। তার 'ভয়াবহ সেই দিনগুলোতে' গ্রন্থের মুক্তিযুদ্ধের কবিতাগুলো খুবই হৃদয়ছোঁয়া। কবি জসীমউদ্‌দীন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৭০ লাইনের দীর্ঘ একটি কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি হৃদয় দিয়ে অত্যন্ত আবেগঘন ভাষায় লিখেছেন। কবিতাটির অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো: মুজিবুর রহমান এই নাম যেন বিসুভিয়াসের অগ্নিউগারী বান। বঙ্গদেশের এ প্রান্ত হতে সকল প্রান্ত ছেয়ে জ্বালায় জ্বালিয়ে মহাকালানল ঝঞ্ঝা অশনি বেয়ে; বিগত দিনের যত অন্যায়, অবিচার ভরা যার; হৃদয়ে হৃদয়ে সঞ্চিত হয়ে সহ্যের অঙ্গার; দিনে দিনে হয় বর্ধিত স্ফীত শত মজলুম বুকে দগ্ধিত হয়ে শত লেলিহান দিল প্রকাশের মুখে, তাহাই যেন বা প্রমূর্ত হয়ে জ্বলন্ত শিখা ধরি ওই নামে আজ অশনি দাপটে ফিরিছে ধরণী ভরি... (বঙ্গবন্ধু, রচনা- ১৯৭১) কবিতাটি হৃদয়স্পর্শী ও পাঠকপ্রিয়। বাঙালির চিরকালের স্বপ্ন আশা ও সংগ্রামের সমন্বয়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা জসীমউদ্‌দীনের এ কবিতাটির ভাষা বর্ণনা অত্যন্ত সুন্দর ও অসাধারণ। পলস্নীর মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সুখ-দুঃখ ও বিরহ-বেদনা আর গ্রাম-বাংলার সৌন্দর্য সুষমার অনন্য রূপকার জসীমউদ্‌দীন ১৯৭৬ সালে ১৪ মার্চ পরলোকগমন করেন। কিন্তু তিনি তার সৃষ্ট সাহিত্যের মধ্যদিয়ে বাঙালি হৃদয়ে চির ভাস্বর হয়ে আছেন।