আমার মৃত্যু হলে দায়ী থাকবেন ডাক্তার খারবান্দা : তসলিমা

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:৩২

যাযাদি ডেস্ক
হাসপাতালের বিছানায় বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।পুরোনো ছবি

কিছুদিন আগেই নিজ বাসার মেঝেতে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছিলেন প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তসলিমার পায়ের ফিমারে ক্র্যাক হয়েছে। এরপর তার হিপ জয়েন্টে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেই অস্ত্রোপচার শেষে একের পর এক ফেসবুক পোস্টে তসলিমা দাবি করেন, ওই প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছেন।

যদিও নিজের অসুস্থতা সংক্রান্ত সেসব ফেসবুক পোস্টে একবারের জন্যও হাসপাতাল ও দায়ী ডাক্তারের নাম উল্লেখ করেননি এই লেখিকা। এর কিছুদিন পর সেসব ফেসবুক পোস্টও নিজের টাইমলাইন থেকে মুছে ফেলেন তিনি। তখন তার অসুস্থতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অনেকে।

এবার তসলিমা জানালেন অভিযুক্ত ডাক্তারের নাম। টুইটারে প্রখ্যাত এই লেখিকা লিখেছেন, ‘টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্টের জটিলতার কারণে যদি আমার মৃত্যু হয়, তাহলে একমাত্র ডাক্তার খারবান্দাই দায়ী থাকবেন। হাঁটুর ব্যথা নিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমার টিএইচআর (THR) করেছিলেন। যা আমার জন্য এখনো দুঃস্বপ্নের। তিনি আমাকে এক্স-রে (XRAY) এবং সিটি ফাইন্ডিং (CT findings) সম্পর্কেও মিথ্যা বলেছেন।’

এর আগে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, হাসপাতালের বেডে আমার শুয়ে থাকার ছবি দেখে অনেকে ভেবেছে, আমার বোধ হয় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়েছে। না, সেসব কিছুই হয়নি। সেদিন ওভারসাইজ পাজামা পরে হাঁটছিলাম ঘরে, পাজামা চপ্পলে আটকে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম। অগত্যা যা করতে হয়, করেছি। হাঁটুতে ব্যথা হচ্ছিল, আইস্প্যাক দিয়েছি, ভলিনি স্প্রে করেছি। মনে হলো হাঁটুর লিগামেন্টে হয়তো লেগেছে, কোনো হাসপাতালে গিয়ে এক্স-রে করে দেখি কী হলো। গেলাম হাসপাতালে। এক্স-রে আর সিটিস্ক্যান করে হাড়ের ডাক্তার বলে দিলেন, পায়ের ফিমার নামের হাড়টির গলায় একখানা ক্র্যাক হয়েছে। এর চিকিৎসা কী? চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দুটো অপশন দিলেন, প্রথম অপশন ইন্টারনাল ফিক্সেশান, ফাটলের জায়গাটা স্ক্রু লাগিয়ে ফিক্স করে দেবেন। দ্বিতীয় অপশান হিপ রিপ্লেসমেন্ট, আমার হিপ কেটে ফেলে দিয়ে কিছু প্লাস্টিক মেটাল দিয়ে একটা নকল হিপ বানিয়ে দেবেন।

আমি তো প্রথম অপশনই নেব, যেটি সত্যিকারের ট্রিটমেন্ট। জোর দিয়ে বললাম, ফিক্সেশান করব। ডাক্তার খুশি হলেন না ততটা। বললেন ফিক্সেশানে সব সময় ফিক্স হয় না, ৮০% কাজ হয়, কিন্তু ২০ % ফেল করে। আমি বললাম, ‘দেখা তো যাক ফিক্স হয় কিনা, হয়তো হবে।’ সার্জন বললেন, ‘ফিক্স না হলে কিন্তু ওই হিপ রিপ্লেসমেন্টেই যেতে হবে।’ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেলাম। সকালে অপারেশন, আমাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হবে, ফিক্সেশান করা হবে।

আচমকা সার্জন এসে বললেন, ‘শুনুন, হিপ রিপ্লেসমেন্ট ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। করলে ওটাই করব। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ফিক্সেশান আপনার কাজ করবে না, আপনার জন্য হিপ বদলানোই বেস্ট।’ আমি সেকেন্ড অপিনিয়নের জন্য সময় চাইলাম। সার্জন খুশি হলেন না। বললেন, অপারেশন এক্ষুনি না করলে প্রবলেম, ইনফেকশন হয়ে যাবে, এটা সেটা। হাসপাতালের অন্য দুজন ডাক্তার যাদের আমি চিনতাম, তারাও আমাকে চাপ দিলেন সার্জনের উপদেশ মেনে নিতে, কারণ উনি অনেক বড় সার্জন’। অগত্যা আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমাকে রাজি হতে বাধ্য হতে হলো। তারপর কী হলো, আমার হিপ জয়েন্ট কেটে ফেলে দিয়ে টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করা হলো। একটা পঙ্গু মানুষের জীবন আমাকে দেওয়া হলো।

যাযাদি/ এস