ভাঙ্গুড়ায় বট-পাকুড়ের বিয়ে

প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০২৩, ১২:১৭

ভাঙ্গুড়ায় (পাবনা) প্রতিনিধি
ছবি-যাযাদি

দু'টি গাছ পাশাপাশি।একটি বট,অন্যটি পাকুড়। দু'টি গাছই লাগানো হয়েছে প্রায় দেড় যুগপূর্বে।গাছে ফল ধরেছে। ফল ধরার মুহুর্তে  দুই গাছের বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে হবে।তাই ঘটা করে বিয়ের আয়োজন। পাকুর গাছটিকে মুখোশ, ধূতি,পাঞ্জাবী পরিয়ে সাজানো হয়েছে 'বর বেশে'।আর পাশের বটগাছটিকে মুখোজ এবং শাড়ি পড়িয়ে সাজানো হয়েছে 'কনে বেশে।'বর-কনের জন্য সাজানো হয়েছে বিয়ের আসর।পাশে বরযাত্রীদের জন্য টাঙ্গানো হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল।বর-কনের আসরে একদিকে কনে পক্ষের যজ্ঞ ও পূজা অর্চনা অপর দিকে চলছে বরপক্ষের যজ্ঞ ও পূজা অর্চনা।সেই সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের বাজনা।

শুভ বিবাহ বন্ধনের আনুসাঙ্গিক জিনিস পত্রের মধ্যে ছিল,কলার ছড়া,শাড়ি,ধূতি,লুঙ্গি,গামছা,লাল সালু কাপড়, পান-সুপারী,সিন্দুর-আবির,পৈতা- মালা, কনের জন্য প্রসাধন সামগ্রী,মিষ্টি, হলুদ,নারিকেল,ছাতা,বর-কনের পাদুকা,মাটির হাড়ি-পাতিল সহ আসবাব পত্র এবং বর-কনের পক্ষে আগত বর-কন্যা যাত্রীদের দেওয়া বিভিন্ন রকম উপঢৌকন। সনাতন ধর্মাবল্মীদের বিয়ের আয়োজনে কোনো কিছুরই কমতি ছিল না।বট-পাকুড়ের এ শুভ বিবাহ বন্ধন দেখতে এলাকার হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমান। গোটা এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

বৃহস্পতিবার (৯মার্চ)দিনভর আনুষ্ঠানিকতা শেষে গোধূলী লগ্নে রাত ৯টায়  বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের  অনুষ্ঠানে ছিল প্যান্ডেল সাজানো,যাগযজ্ঞ প্রতিষ্ঠা,শ্রী শ্রী গীতাপাঠ,বেদপাঠ, মাতৃকিা ও বসুমাতা পূজা ও বৃদ্ধিশ্রদ্ধ।

পাবনার ভাঙ্গুড়ায়  উপজেলা কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান মাঠ চত্বরে কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান কমিটির সার্বিক তত্বাবধানে বট-পাকুড়ের বিয়ের আয়োজন করেন দক্ষিণ মেন্দা পালপাড়া গ্রামের মৃত দুলাল চন্দ্র পালের পুত্র ও ধর্মবৃক্ষ কল্যানীয়া বটেশ্বরী দেবীর(বট)পিতা শ্রী সাগর কুৃমার পাল ও ভাঙ্গুড়া বাজাস্থ মৃত মলয় চাকীর পুত্র ও ধর্মবৃক্ষ কল্যানীয় পাকুরেশ্বর (পাকুর)পিতা পুলক কুমার চাকীর পরিবার। বর পক্ষের ছিলেন,পিতা পুলক কুমার  চাকী সহ বর পক্ষের আত্মীয় স্বজন, কন্যা পক্ষের উপস্থিত ছিলেন,কনের পিতা সাগর পাল,কাকা সাধন পাল সহ আত্মীয় স্বজন।

 কেন্দ্রীয় মহাশ্মশাল কমিটির সভাপতি সংগীত কুমার পাল,সাধারণ সম্পাদক সমরজিৎ গুণ, প্রচার সম্পাদক বিকাশ চন্দ্র চন্দ,উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মলয় কুমার দেব,উপজেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি অবঃ অধ্যাপক ভবেশ চন্দ্র দে,নির্মল রায়, পরেশ চন্দ্র ব্যানার্জী, রনজিত হালদার,উত্তম সূত্রধর,সুভাষ সূত্রধর প্রমূখ।

বট-পাকুড়ের এ বিয়েতে পুরোহিত প্রদীপ কুমার গোস্বামী বলেন," সব জীবের মঙ্গল কামনায় এ অনুষ্ঠান করা হয়।" আয়োজক বর পিতা পুলক কুমার চাকী,ও কনে পিতা সাগর কুমার পাল জানান,বৃক্ষ ধরিত্রী শীতল রাখে এবং বৃক্ষের মাধ্যমে সৃষ্টি কর্তা সব জীবের আহার প্রদান করেন।আমার পূর্ব পুরুষরাও এ যজ্ঞ করতেন, বংশ পরস্পরায় আমরা করছি।স্থানীয়দের কাছে এটা বট-পুকুড়ের বিয়ে হিসেবেই পরিচিত। মহান সৃষ্টি কর্তা সবার মঙ্গল করুক।'

যাযাদি/ এস