ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন জালু মিয়া

প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:১৯ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩১

এমএইচ শিপন, বোরহানউদ্দিন, ভোলা

ঘোড়ার পিঠে চড়ে বিয়েবাড়ি বা যুদ্ধে যাবার মত  ঘটনা সচরাচর শোনা গেলেও ভিক্ষা করার শোনা যায়না। আবার বাংলা প্রবচন ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ হাঁটিয়া চলিল’ বহুল প্রচলিত প্রবচনটি এখন বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায়- ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ ভিক্ষায় চলিল’। ঘোড়ায় চরে ভিক্ষা করা এমন এক ভিক্ষুক ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাঁচরা ইউনিয়নের চর গঙ্গাপুর গ্রামের জালাল ওরফে জালু মিয়া। 

দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করেই সংসার চালান তিনি। এক পর্যায়ে হাঁটার কষ্ট লাগবে ভিক্ষা করতে পরিকল্পনা করেন ঘোড়া কেনার। তাই ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে করোনাকালীন সময়ের শুরুতে স্থানীয় দরইুন বাজারের মো. স্বপন মৃধার কাছ থেকে একটি ঘোড়া কেনেন। এরপর জালু মিয়া ঘোড়ার পিঠে চড়ে গ্রামসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট-বাজারে ভিক্ষা করে যাচ্ছেন। ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করায় স্থানীয়দের কাছে জালু মিয়া রাজকীয় ও জমিদার ভিক্ষুক নামে পরিচিতি লাভ করেছেন।
অন্যদিকে তার স্ত্রী শাহানুর বেগমও  গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ও বাজারে ভিক্ষা করেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাঁচরা ইউনিয়নের ২ নাম্বর ওয়ার্ডের চর গঙ্গাপুর গ্রামের মটবাড়িতে ১ শতাংশ যায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন জালাল ওরফে জালু মিয়া ও তার স্ত্রী শাহানুর বেগম। জালু মিয়ার জীর্নশীর্ণ দেহ। কিছুটা কুজো হয়ে হাঁটেন। নিজের জায়গা-জমি না থাকায় ওই বাড়ির ঢাকায় বসবাসরত  লোকমান হোসেনের জমিতে কোনো রকম একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন তিনি। ঝড়-বৃষ্টির দিনে ভিজে যান তারা। ঝড়-বৃষ্টি যা-ই হোক না কেন তিনি  নিজের ঘর থেকে নড়েন না ।

 
ঘরে দেখা যায়, তার স্ত্রী চুলায় মোটা ঢাল বসিয়েছেন। অন্য কিছু রান্না করার মত কিছুই নেই। তিনি জানালেন, ঘরে আর এক পোয়া(২৫০ গ্রাম)মত চাল আছে। আগামিকাল ভিক্ষা না করলে উপোস থাকতে হবে।
নিঃসন্তান জালু মিয়া ভিক্ষা করার আগে ঢাকায় ১০ বছর ঝাড়ুদারের কাজ করতেন। কাজ করার ক্ষমতা কমে গেলে জীবিকার তাগিদে স্ত্রীকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর হেঁটে ভিক্ষা করে এক সময় হাঁটার ক্ষমতাও কমে যায় তার। 


মো. জালাল ওরফে জালু মিয়া জানান, কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় প্রায় ৯-১০ বছর আগে স্ত্রী শাহানুর বেগমকে নিয়ে তাদের ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে হেঁটে ভিক্ষা করতেন। কয়েক বছর এভাবে চলার পর একদিন জালু মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর সুস্থ হলেও হেঁটে বেশি দূর যেতে পারতেন না। পরে কেনা ঘোড়ার পিঠে চড়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও হাট-বাজারে গিয়ে ভিক্ষা করেন।


তিনি আরও জানান, তারা দুজনই বয়সের কারণে সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশি ভিক্ষা করতে পারেন না। এতে স্বামী-স্ত্রীর সপ্তাহে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হলেও ঘোড়ার খাবার, নিজের সংসার ও ওষুধ, চিকিৎসায় খরচ করে ঠিকমতো সংসার চলে না তাদের। যার কারণে জমি ও ঘর কিছুই করতে পরেননি।


অন্যদিকে তার বাবা আ. মতলেব জমি-জমা কিছুউ রেখে যেতে পারেননি। তারা ৪ ভাই, তিন বোন। ভাইয়েরা দিনমজুরের কাজ করে। 

ভিক্ষা করেন কেন এ প্রশ্নে জালু মিয়া উল্টো প্রশ্ন করেন, ভিক্ষা না করলে চুরি করতে হত। সেটা কী ভাল হত? সরকার নাকি ঘর দেয়, চাল দেয়। আমার চেয়ে গরীব কে। আমি কি একটা ঘর, সরকারী চাল পেতে পারিনা?
জালু মিয়ার প্রতিবেশী আমির হোসেন ও মিনারা বেগম জানান, জালু মিয়া ও তার স্ত্রী ভাল মানুষ। তবে মাথায় কিছুটা গন্ডেগোল আছে।  

সাঁচরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুল্যাহ মৃধা জানান, জালু মিয়ার কষ্ট লাগবে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। 

বোরহানউদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক জানান, জালু মিয়া ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন- এ বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বর্তমানে সাঁচরা ইউনিয়নে মুজিববর্ষের ঘর হচ্ছেনা। হলে জমিসহ ঘর দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

যাযাদি/ এস