ফেরি করে আর পত্রিকা বিলি করবেন না ইউসুফ চাচা

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৩, ১২:৩২

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ (বাঁশখালী) চট্টগ্রাম

মোহাম্মদ ইউসুফ। সবাই তাকে চিনে ইউসুফ চাচা এবং বুড়ো ইউসুফ নামে। ফেরি করে পত্রিকা বিলি করাই ছিল তার প্রধান কাজ। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ফেরি করে পত্রিকা বিক্রি করা কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। চট্টগ্রামে তিনিই একমাত্র দীর্ঘ সময় (৪৫ বছর) হকার পেশায় যুক্ত ছিলেন। আর সেই ইউসুফ চাচা (৬৫) ফেরি করে আর কখনো পত্রিকা বিলি করবেন না। গতকাল বিকেলে কক্সবাজার জেলার রামু থেকে তার জীবনের দীর্ঘদিনের সঙ্গী জন্ডিস ও লিভারের চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফেরার পথে গাড়িতেই নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন..)। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার বড় ছেলে মো. সোহেল।

মৃত মোহাম্মদ ইউসুফ চাচা বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেচুরিয়ার হুজিত্যা পাড়া এলাকার গুরা বাইশ্যার পুত্র। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে রেখে যান। এছাড়াও তার স্ত্রী দুই বছর আগে শ্বাসকষ্টে মারা যায়। এদিকে গতকাল রাত ৯ টায় বৈলছড়ি হুজিত্যাপাড়া বায়তুল নাঈম জামে মসজিদ মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তার বড় ছেলে মো. সোহেল জানান, বুধবার (২১ জুন) বাবাকে চিকিৎসা করাতে রামুর এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। বাড়িতে চলে আসার পথে বিকেল ৪টার সময় হটাৎ গাড়িতে তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল এলাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এদিকে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পত্রিকার পাঠকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তিনি গত ৪৫ বছর ধরে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ গেইটের সামনে সাইকেল নিয়ে অবস্থান করে এবং দক্ষিণ বাঁশখালীতে ৭টি ইউনিয়নে পত্রিকা বিলি বন্টন করত মো. ইউসুফ। দূর্যোগকালীন সময়েও ছুটে চলত সে। পাঠকদের খুশি করা ছিল তার অভ্যাস। সে কষ্ট অনুভব করেও কাউকে বুঝতে দেয়নি। দীর্ঘদিন লিভার ও জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়ে জর্জরিত থাকা অবস্থায় গ্রামে গ্রামে ঘুরে পত্রিকা বিক্রি করেছেন তিনি।

এদিকে তার মৃত্যুতে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদুজ্জামান চৌধুরী, বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল উদ্দীন পিপিএম, বাঁশখালী চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি, কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ. ন.ম শাহাদত আলম, সাধারণ সম্পাদক চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, পত্রিকার এজেন্ট, পাঠকবৃন্দ, তার সহকর্মীরা শোক প্রকাশ করেন। এবং শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালে তরুণ বয়সে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে দেখেন, পত্রিকা বিলি করার এই কাজে ৪৫ বছর পার হয়ে গেছে তার। উপজেলা পরিষদের সামনে তিনি পত্রিকা নিয়ে বসতেন। এরপরে সাইকেলে করে ফেরি করে বন্টন করেন পত্রিকা। বাঁশখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে পত্রিকার খবর নিয়ে ছুটে চলেন তিনি। ঘুম থেকে সকাল ৬টায় উঠেই তিনি পত্রিকার এজেন্ট ও স্থানীয় পত্রিকার সার্কুলেশন ম্যানেজারদের কাছে যান। এরপর তাদের কাছ থেকে পত্রিকা নেন। পত্রিকা নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাইকেলের প্যাডেল মেরে শুরু হয় তার ছুটে চলা। অলিতে-গলিতে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। এখন থেকে আর কখনো ইউসুফ চাচাকে পত্রিকা ফেরি করতে দেখা যাবে না।

যাযাদি/ এস