বেগম বাজার মসজিদ: এমন মসজিদ দেশে আর একটিও নেই

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:০৭ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১১

যাযাদি ডেস্ক

বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান মুরশিদ কুলি খান ১৭০০ থেকে ১৭০৪ সালের মধ্যে পুরান ঢাকার বেগম বাজারে অনন্য এই মসজিদ নির্মাণ করেন। স্থাপত্য রীতির কারণেই বাংলাদেশের অন্য যে কোনো মসজিদ থেকে আলাদা এটি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বেগম বাজারের এই মসজিদের ইতিহাস।

জানা যায়, মুর্শিদকুলি খাঁর আরেক নাম ছিল করতলব খান। তাঁর নামানুসারেই মসজিদটির নামকরণ হয় করতলব খান মসজিদ। বেগমবাজারে অবস্থিত বলে এটি বেগমবাজার মসজিদ নামেও পরিচিত।

মসজিদটি একটি ভল্টেড (নলাকৃতি ছাদবিশিষ্ট) ভিত্তিমঞ্চের পশ্চিমের অর্ধেক অংশের ওপর তলায় অবস্থিত। ভিত্তিমঞ্চের পরিমাপ ৩৯.৬২ মি. বাই ১৩.৪১ মি.। উঁচু ভিত্তিমঞ্চের নিচতলায় রয়েছে দোকানের সারি, যার পূর্ব দিকে রয়েছে মসজিদে ওঠার সিঁড়ি। ভিত্তিমঞ্চের পূর্ব দিকে একটি কূপ আছে। একসময় এই কূপের পানি দিয়েই মুসল্লিরা অজু করতেন। উত্তর পাশে ইমাম সাহেবের বসবাসের জন্য দোচালা ছাদবিশিষ্ট বাংলা কুঁড়েঘর আকৃতির একটি কক্ষ রয়েছে।

মূল মসজিদটির আয়তকার ভূমি নকশায় নির্মিত, যার পরিমাপ ২৫.৬ মি. বাই ৫.১৮ মি.। অভ্যন্তর ভাগ আড়াআড়ি চারটি খিলানের মাধ্যমে পাঁচটি বেতে বিভক্ত। কেন্দ্রীয় বেটি বর্গাকার পাশেরগুলো থেকে বড়। পাঁচটি বে-এর ওপর পাঁচটি সুদৃশ্য গম্বুজ মসজিদের শোভা বর্ধন করছে। গম্বুজগুলো অষ্টভুজাকৃতি ড্রামের ওপর পেনডেনটিভ পদ্ধতিতে নির্মিত হয়েছে।

মসজিদের পূর্ব দিকে রয়েছে পাঁচটি প্রবেশপথ। প্রতিটি প্রবেশপথ বরাবর মসজিদের অভ্যন্তর ভাগের পশ্চিম দেয়ালে একটি করে মিহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি শুধু ইমাম সাহেবের নামাজে দাঁড়ানোর স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকি চারটি মিহরাব মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নির্মিত হয়েছে।

প্রবেশপথ ও মিহরাবগুলো আয়তকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। প্রবেশপথের ওপরে অর্ধগম্বুজ আকৃতির খিলান ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত ও পাশে অষ্টভুজ আকৃতির ছোট মিনার রয়েছে, যা ছাদের চারপাশে নির্মিত প্যারাপেটের ওপরে উঠে গেছে। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালেও একটি করে প্রবেশপথ রয়েছে।

মসজিদের ভেতর ও বহিরাংশ চমৎকারভাবে অলংকৃত। এর মিহরাব, প্রবেশপথের ওপরে, গম্বুজের চারদিকে পদ্মপাপড়ির মারলন নকশা ও প্যানেল নকশা দ্বারা শোভিত। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি অর্ধগম্বুজ ভল্টের মাধ্যমে নির্মিত ও স্টাকো পদ্ধতিতে মুকারনাশ নকশা দ্বারা সজ্জিত।

মসজিদের পার্শ্ব বরুজ ও প্রতিটি পিলারের ওপর ক্ষুদ্রাকার গম্বুজ বা কিউপোলা স্থাপন করা হয়েছে। গম্বুজ ও কিউপোলার ওপর কলসাকৃতি শিরোচূড়া মসজিদটিকে দর্শনীয় করে তুলেছে। মসজিদটি বহুবার সংস্কারের ফলে যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটলেও কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য এখনো টিকে আছে।

যাযাদি/ এম