দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির এখন ধ্বংসের মুখে

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ২০:০২

যাযাদি ডেস্ক

দিনাজপুরের কাহারোলে উপজেলার ৫’শ বছরের প্রাচীন কান্তজিউর মন্দির পোড়ামাটির সে সময়ের জীব ও প্রাণশক্তির অলঙ্করনে আজও দাড়িয়ে আছে। প্রাচীন এই মন্দিরটি দেশ—বিদেশের দর্শনার্থীরা এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন ভিড় জমায়। পোড়ামাটির অলঙ্করনে দেওয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তোলা পৌরাণিক কাহিনী সমূহ দেখে ভ্রমন পিয়াসীরা মুগ্ধ হবে। 

কান্তজিউ মন্দির বা কান্তনগর মন্দির দিনাজপুর সদর হতে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা হতে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে ঢেঁপানদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এটি নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত। 

কারণ তিনতলা বিশিষ্ট এই মন্দিরের ৯টি চুড়া বা রত্ন ছিল। কিন্তু ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে চূড়াগুলো ভেঙ্গে পরে।  তথ্যে সূত্রে জানা যায় ১৮ শতকে নির্মিত একটি চমৎকার ধর্মীয় স্থাপনা। মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচতি যা লৌকিক রাধা কৃষ্ণের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে বাংলায় প্রচলিত।

এর গায়ে লাগানো প্রত্যেকটা ফলকে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী বর্ণিত রয়েছে। তবে কিছু ফলকে মুঘল আমলের চিত্র বর্ণনাও দেখা যায়। রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী বর্ণিত আছে মন্দিরের ফলকে,কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ,সীতার বনবাস,বাকাসুর হত্যা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক কাহিনী স্থান পেয়েছে এই মন্দিরে।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শ্রীকৃষ্ণের লৌকিক উপস্থাপন, শ্রীকৃষ্ণের কাহিনী সমূহকে এখানে জনসাধারণের জীবনের মত চিত্রায়িত করা হয়েছে।মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পৌরাণিক গল্প কথা। পৌরাণিক কাহিনীর লৌকিক উপস্থাপনে কারিগরদের সৃজনশীলতা ও দক্ষতার এক অনন্য নিদর্শন এই মন্দিরের ফলকগুলো।

তৎকালীন রাজা প্রাণনাথ রায় ১৭০৪ সালে এই মন্দির নির্মানের কাজ শুরু করেন। উঁচু বেদীর উপর কারিগরদের অসামান্য দক্ষতায় মন্দির নির্মাণ কাজ চলাকালীন জীবন সায়ান্নে চলে যায় রাজা প্রাণ নাথ রায়। মৃত্যু বরন করেন ১৭২২ সালে। তার পোষ্যপুত্র রামনাথ রায় পিতার শেষ ইচ্ছা অনুসারে দীর্ঘ ৩০ বছর তদারকি করে ১৭৫২ সালে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন।

প্রাচীন এই মন্দিরে প্রতি বছর রাশ পূর্ণিমায়, রাশ যাত্রায় মাস ব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হলেও দুর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা  মন্দির দেখার জন্য আসলেও মন্দির প্রান্তরে নেই কোন আবাসিক হোটেল ব্যবস্থা ও রেস্টুরেন্ট। মন্দিরটির ইতিহাস এবং সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে স্থানটির হয়ে উঠতে পারে আন্তজার্তিকমানের পর্যটন কেন্দ্র।

লেখক: আরিফুর রহমান

যাযাদি/ এম