আজ পহেলা ফাল্গুন....
প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৭

শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, রক্তাক্ত শিমুল এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যে দুলছে আবেগি মন প্রাণ, প্রাণে লেগেছে সতেজ হাওয়া। আজ পহেলা ফাল্গুন,ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। ফাল্গুনের হাত ধরে যৌবনের উদ্দামতা বয়ে নিয়ে এলো আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উদ্বেলতা।
তরুণ হৃদয়ে বিভেদ ভুলে, ‘চির নূতনের’ প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দোলা। লাল আর হলুদের বাসন্তী রঙে তাই আজ বসন্তের উন্মাদনায়। বসন্ত অনেক ফুলের বাহারে সজ্জিত হলেও গাঁদা ফুলের রঙকেই এদিনে তাদের পোশাকে ধারণ করে তরুণ-তরুণীরা। খোঁপায় শোভা পায় গাঁদা ফুলের মালা। বসন্তের আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যায় না গ্রাম্যজীবনও। আমের মুকুলের সৌরভে আর পিঠাপুলির মৌতাতে গ্রামে বসন্তের আমেজ একটু বেশিই ধরা পড়ে। বসন্তকে তারা আরও নিবিড়ভাবে বরণ করে। বসন্ত শুধু অশোক-পলাশ-শিমুলেই উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, বাংলার ঐতিহাসিক স্মৃতির ওপরও রং ছড়ায়।
বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বিদায় নিয়েছে শীত। ঋতুরাজ বসন্ত তার নিজস্ব উষ্ণতায় প্রাণ সঞ্চার করছে প্রকৃতিতে। বসন্ত ঋতু লুকিয়ে আছে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসের ভেতর। তবে অনুভবের জায়গা থেকে বলতে গেলে শুধু ফাল্গুন মাসের কথাই বলতে হবে। বাংলা বছর গণনায় ফাল্গুন ১১তম মাস হলেও কালের আবর্তনে এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটি শুধু একটি মাসের নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ সারাদেশে এত বর্ণিল সাজ। বসন্তের এ আগমনে সর্বস্তরের মানুষ বিশেষত তরুণ-তরুণী বসন্ত উৎসবে আজ মেতে উঠবে। শীতকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়েই বসন্তবরণে চলবে ধুম আয়োজন। পাতা ঝরা শীত শেষে আর বসন্ত আসবে ফুলের ডালা সাজিয়ে। বাসন্তি ফুলের পরশ আর সৌরভে কেটে যাবে শীতের জরা-জীর্ণতা।
একটা সময় ছিল যখন বাসন্তী রঙের শাড়ি, রঙিন পাঞ্জাবিতেই বসন্তের ছবিটা ফুটিয়ে তোলার আবহটা চোখে পড়ত। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে বসন্তের পোশাক ঘিরে নতুন এক উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। যে উচ্ছ্বাসটা বসন্তের উৎসব আমেজকে দিয়েছে গহন ছন্দময়তা। সেটা হলো বাঙালির আবহমান, চিরন্তন সংস্কৃতিকে নান্দনিকতার শোভায় উৎকীর্ণ করে পোশাকের আদলটা আধুনিক ডিজাইনের শৈল্পিক পঙক্তিতে বুনন করে তোলার নিবিড় প্রয়াস। নগর জীবনের নানা ব্যস্ততায় কখন যে ঋতুর বদল ঘটে তা যেন নগরবাসী জানতেই পারে না। তবে এর পরিবর্তন বেশ অনেকদিন ধরে লক্ষণীয় বাংলার ফ্যাশনধারার শিল্পীত উদ্যোগ একেবারেই পাল্টে দিয়েছে এ অবস্থার। ধুলোময়, শব্দজটের নগর জীবনের প্রাণেও এনে দিয়েছে নতুন স্পন্দন। নিসর্গের পল অনুপলে যখন ভালোবাসা দিবসের হৃৎস্পন্দনে বাজে মায়াবি এক রিদম।
তখন ঢাকার বাংলা একাডেমিতে শুরু হয়ে গেছে বাঙালির প্রাণের একুশে গ্রন্থমেলা। এই মেলাকে ঘিরে বাঙালির আবেগের সীমাটা ছাড়িয়ে যায় নীল দিগন্তকেও। আর এই দিগন্তের রঙটা দেশীয় ফ্যাশন ভুবনের প্রতিটি স্তবকে নতুন যাত্রায় হয় উদ্ভাসিত। ঋতুরাজ বসন্ত, ভ্যালেন্টাই ডে এবং একুশে গ্রন্থমেলার মতো ‘ত্রৈয়ী’ স্পন্দনে যেন প্রকৃতির উড়ুউড়ু মনটাই আজ উঠেছে ভিজে বাসন্তী রঙের জাফরানি ছোঁয়ায়! তাই কবির ভাষায়-‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।
যাযাদি/ এস