ইন্দোনেশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী প্রতারকদের বিচারের দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন
প্রকাশ | ১০ মে ২০২৩, ১৮:৫৯
কানাডায় পাঠানোর কথা বলে গাইবান্ধার দুই প্রতারক অর্ধশতাধিক যুবকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। প্রতারণার শিকার যুবকদের আর্থিক ক্ষতি তো হয়েছেই, ভূয়া প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদনের দায়ে কানাডা সরকারের খাতায় কালোতালিকাভুক্ত হয়েছেন তারা।
দুই প্রতারক রফিকুল ও শফিকুলের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা। তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোহিতা কামনা করেছেন। প্রতারকদের পাসপোর্ট বাতিলসহ তাদের গ্রেফতারের দাবি করেছেন।
আজ বুধবার (১০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা দেশের ঢাকা, সিলেট, কুষ্টিয়া, কিশোরগঞ্জ, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।
মানববন্ধনে সিলেটের বাসিন্দা সাদেক আহম্মদ তপাদার রুহুল বলেন, গত ২ বছর আগে কানাডা সরকার তাদের দেশের অভিবাসন বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। এই নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর ভিডিও ও বিজ্ঞপন আমাদের সবার চোখে পরে ! আমরা খুঁজতে কানাডা যাবার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজতে থাকি ! এরই মধ্যে আমাদের চোখে পড়ে জাস্ট ফোর ইউ (Just 4 You) নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল। সেখানে কানাডা যাবার বিভিন্ন চটকদারি ভিডিও আমাদের নজরে আসে। স্ক্রীনে দেওয়া whatsapp-এ যোগাযোগ করি এবং কানাডা যাবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করি।
এই প্রতারক রফিকুল ইসলাম নিজেকে কানাডা প্রবাসী দাবি করে এবং নিজের কোম্পানিতে কাজ দিবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করে। কথা মোতাবেক আমরা তাকে বিভিন্ন সময় ৩-৪ কিস্তিতে টাকা প্রদান করি। অনেকেই বায়োমেট্রিক পর্যন্ত দিয়েছে। কেউ কেউ মেডিকেল করিয়েছে। পরে আমরা জানতে পারি এই প্রতারক দুই ভাই ভুয়া কোম্পানী দেখিয়ে ভুয়া কাগজ জব অফার দেয়। তার অফিসের ঠিকানা দেখিয়ে আবেদন করার পর কানাডার সরকারের তরফ থেকে জবাব আসে ওই কোম্পানীর কোনো অস্তিত্ব নেই। একই সাথে ভূয়া প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন করার দায়ে অনেককেই কালোতালিকাভুক্ত করেছে কানাডা।
যশোরের ভুক্তভোগী সাইফুর রহমান রাজন বলেন, রফিকুল ইসলামের ৪ স্ত্রী। প্রথম জন রহিমা দুই যমজ ছেলে নিয়ে গাইবান্ধাতে আছেন। দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখা দুই ছেলে নিয়ে ইন্দনেশিয়াতে। তৃতীয় স্ত্রী ফিলিপিনো। এক মেয়ে নিয়ে চার বছর ধরে দুবাই। আর চতুর্থ স্ত্রী রোকসানা বর্তমানে ঢাকায়। রোকসানা বাংলাদেশের সকল ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করেন। দুই সপ্তাহ আগে তিনি ইন্দোনেশীয় ভিসার জন্য আবেদন করছে।
সাভারের সাইফুল ইসলাম বলেন, রফিকুল ও শফিকুল আমাদের মতো অসংখ্য মানুষের টাকায় ইন্দনেশিয়াতে নারিকেল বাগানের ইজারা নিয়েছে। ভিজিট ভিসায় এখন কানাডা ঢোকার চেষ্টা করছে। তিনি জানান, প্রতারকরা বর্তমানে বিনিয়োগ ভিসায় ইন্দনেশিয়াতে বসবাস করছে। ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট দিয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খোলেছেন। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, ডাচবাংলা ব্যাংক, ফাষ্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা নিয়েছেন তিনি। এ টাকা হুন্ডি করে ইন্দোনেসিতে পাঁচার করছে। রাজধানীর উত্তরা ও গাইবান্ধাতে শতশত কোটি কাটার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
সকাল ১০ টা থেকে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। এ সময় কুমিল্লার কাদের মিয়া, কুষ্টিয়ার মাজেদুল ইসলাম, মিলন মিয়া, গাইবান্ধার আব্দুল মোতালেব, কক্সবাজারের জিয়াউর রহমান, কিশোরগঞ্জের রাহুল মিয়া, সাভারের সাইফুল ইসলামসহ প্রতারণার শিকার অর্ধশতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
যাযাদি/এসএস