ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি: সহজ ডটকমের দুই কর্মীসহ গ্রেপ্তার ৯

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫৫

যাযাদি ডেস্ক

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম মূলহোতা সহজ ডটকমের পিয়ন মো. মিজান ঢালী ও সার্ভার অপারেটর নিউটন বিশ্বাসসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ট্রেনের বিপুল পরিমাণ টিকিট, ৮টি মোবাইল ফোন, ১টি এনআইডি, ১টি ড্রাইভিং লাইসেন্স, কালোবাজারির বিভিন্ন আলামত এবং টিকিট বিক্রির নগদ ১১ হাজার ৪২২ টাকা জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে রাজধানীর কমলাপুর এবং সবুজবাগ এলাকায় র‌্যাব-৩ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন, মো. সোহেল ঢালী (৩০), মো. সুমন (৩৯), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), মো. শাহজালাল হোসেন (৪২), মো. রাসেল (২৪), মো. জয়নাল আবেদীন (৪৬ ও মো. সবুর হাওলাদার (৪০)।

শুক্রবার (২২ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঢালী সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানের নেতৃত্বে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের প্রায় সব ধরনের ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল। মিজান দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ২০০৩ সালে তিনি চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিলের কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেন। পরে রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ে সিএনএস ডট বিডির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিটের চুক্তি সহজ ডট কমকে দেওয়া হলে সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন টিকিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকায় দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে মিজানের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই তিনি বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজি চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করতেন।

সহজ ডটকমের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের সার্ভার অপারেটর নিউটন বিশ্বাস, স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ গ্রেপ্তার সবুর হাওলাদারসহ এবং পলাতক আব্দুল মোত্তালিব, আশিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত।

বিশেষ করে ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ্য করে মিজান ও সোহেল বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যক টিকিট সংগ্রহ করতেন। মিজান ও সোহেল প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকিট কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রি করতেন। তারা আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগের চাইতেও বেশি সংখ্যক টিকিট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিলেন।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ৫০ শতাংশ সহজ ডটকম ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টার ম্যানরা পেতেন এবং বাকিটা সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এই অর্থ কখনো তারা হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিতেন, আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতেন। সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য অবৈধভাবে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। এভাবেই পরস্পরের যোগসাজশে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিলেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিউটন ২০১২ সালে স্টেশন সাপোর্ট হিসেবে সিএনএস ডট বিডিতে যোগদান করে ২০১৬ সালে সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পান। পরে ২০২০ সালে সহজ ডট কমে চুক্তিবদ্ধ হলেও তার চাকরি বহাল থাকে এবং পুনরায় সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পান।

তিনি সার্ভার অপারেটর হওয়ায় বিভিন্ন ট্রেনের শিডিউল ও টিকিট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন বিধায় এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানকে তথ্য প্রদান করতেন। গ্রেপ্তার সবুর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সহজ ডট কমের স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে চাকরি করতেন। গ্রেপ্তার সবুর সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানের সঙ্গে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সহজ ডটকম টিকিট কালোবাজারির দায় এড়াতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিল।

যাযাদি/ এসএম