ফাঁকা ঢাকা, ফিরতি যাত্রায় মানুষ কম

প্রকাশ | ১০ জুন ২০২৫, ১২:৩৫

সাখাওয়াত হোসেন
সংগৃহীত

ঈদের আমেজ শেষ করে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। যদিও আগামী শনিবার পর্যন্ত ছুটি উপভোগ করবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের একটা অংশ ইতিমধ্যে ঢাকায় ফিরেছেন। ঈদের ছুটিতে কার্যত খালি ঢাকা।

গতকালও রাজধানী অনেকটাই ফাঁকা ছিল।  বিভিন্ন পয়েন্টে যান চলাচল বাড়লেও বড় ধরনের যানজট তৈরি হয়নি। খুলেনি দোকানপাট। বাজারে ক্রেতা না থাকায় কাঁচাবাজারগুলোতেও  বিক্রেতারা নতুন পণ্য নিয়ে আসছেন না। মঙ্গলবার রাজধানী জুড়ে এসব চিত্র দেখা যায়।  


বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে যাত্রীদের আনাগোনা থাকলেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তা খুবই কম। অনেকে এখনো গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। ফলে রাজধানীর রাস্তাঘাট অপেক্ষাকৃত ফাঁকা, যানজটের তীব্রতা নেই, পরিবেশ অনেকটাই শান্ত। এতে অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। রইছ পরিবহন বাসের একজন চালক বলেন, অল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে এই কয়দিন চলাচল করছি, বলা যায় হাতেগোনা যাত্রী । ঢাকায় মানুষ নেই বললেই চলে।  তেলের টাকাও ঠিকমতো উঠে না।  আজ ঈদের চতুর্থ দিন, আজও ঢাকায় মানুষ নেই। রবিউল নামের একজন সিএনজিচালক  বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র দুটো ট্রিপ পেয়েছি। ঈদের এক-দুই দিন ঢাকা ফাঁকা থাকতো, কিন্তু এবার ঈদের চতুর্থ দিনে এসেও ঢাকা প্রায় ফাঁকা।  


এদিকে ঢাকায় ঈদ করা মানুষজন কিছুটা স্বস্তি পেতে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। ঈদের দিন সকাল থেকেই শুরু হয় বিনোদন কেন্দ্রে ভিড়। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে  আসা  দর্শনার্থীরা মূলত ঢাকার বাসিন্দা এবং অনেকেই আছেন যারা গ্রামে না গিয়ে ঢাকায় থেকে গেছেন। ঢাকাবাসীর পাশাপাশি আশপাশের জেলা ও শহর থেকেও মানুষ ছুটে এসেছেন ঢাকায়। ঢাকার বড় পার্ক, চিড়িয়াখানা, জাতীয় জাদুঘর, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন থিম পার্কে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। ঢাকার বাসিন্দা এজাজ রহমান বলেন, এখন বছরের অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় কম। ওদিকে রেলস্টেশনে নির্ধারিত সময়ে ফিরছে ট্রেন। ঢাকায় আসা ট্রেনগুলোর বেশির ভাগ আসন ফাঁকা দেখা গেছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, আজকেও ঢাকায় আসার যাত্রীদের তুলনায় ঢাকা ছাড়ার যাত্রীর সংখ্যা বেশি।  ঈদে ফিরতি যাত্রায় এখনো যাত্রীদের চাপ পড়েনি। ঈদের ছুটি আরও চারদিন আছে। আগামী শুক্রবার ও শনিবার ফিরতি যাত্রার চাপ বেশি পড়বে।    


 
মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল থেকে রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী-সায়দাবাদ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার গাড়ি খুব বেশি রাজধানীতে প্রবেশ করছে না। যেগুলো আসছে সেগুলোও যাত্রীপূর্ণ নয়। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের পরে এবার লম্বা ছুটি। খুব জরুরি না হলে লোকজন এখনো ঢাকা ফিরতে শুরু করেননি। মূলত অফিস, কলকারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান শুরু হবে আগামী সপ্তাহ থেকে। সেই হিসাবে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ঢলের মতো রাজধানীতে ফিরবে মানুষ।

 

ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলাচল করা পদ্মা এক্সপ্রেসের গাড়িচালক মো. শাহ আলম মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে দাঁড়িয়ে বলেন, গতকালের চেয়ে আজ যাত্রী কিছুটা বেশি। ছুটি বেশি তাই মানুষ আসবে আরও পরে। আজ কিছুটা যাত্রী বেশি হলেও সব সিট ভরেনি। পথে আসতে আসতে কিছু যাত্রী পেয়েছি। ঢাকা আসতে পথে যানজট বা অন্য কোনো সমস্যা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

 

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে সকাল পৌঁনে ৯টায় সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে এসে পৌঁছায় আল আরাফা এক্সপ্রেসের একটি বাস। ওই বাসের চালক মোহাম্মদ আলম বলেন, আজও যাত্রী কম, যাত্রী বাড়বে কাল থেকে। এবার ছুটি বেশি, মানুষ আসছে আস্তে আস্তে।

পটুয়াখালী থেকে সপরিবারে ঢাকায় ফিরেছেন চাকরিজীবী ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, আমার ছুটি গতকালই শেষ, আজই আমার অফিস শুরু করতে হবে। একটু দেরি করে গেলে সমস্যা নেই, তাই সকালে চলে আসলাম।

 

মঙ্গলবার সকালে সায়দাবাদের বাস টার্মিনালের আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে, দু-একটি বাস আসলেই সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল চালক, অটোরিকশা চালকরা যাত্রীরা আশায় বাসটি ঘিরে ধরছেন।

 

বাস মালিকদের নিয়ে গঠন করা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটির সদস্য ও এম আর ট্রান্সপোর্টের মালিক মো. শাহ আলম বলেন, দু-একজন করে যাত্রীরা আসছে। গতরাতে যেসব গাড়ি গেছে সেগুলোর অনেকগুলোই সকালে এসেছে। তবে যাত্রী খুবই কম। আশা করি কাল থেকে ঢাকায় ফেরার যাত্রী বাড়বে।