মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হত্যার ৬ বছর পর কঙ্কালের পরিচয় ও রহস্য উদঘাটন

বিচারকের কাছে জবানবন্দি
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:০৩

বাড়ির পাঁকা দেয়াল নির্মাণের সূত্রধরেই মিলল নিখোঁজ রাজীবের কঙ্কাল। কঙ্কালের ডিএনএ টেস্টের সূত্রধরেই শেষ পর্যন্ত হত্যাকান্ডে জড়িত একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তার সালাম আদালতে রাজীব হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পূর্ব শত্রুতা ও ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে রাজীবকে হত্যার পর লাশ ফেলে দেয়া হয়েছিল।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার জানালেন এমন তথ্য।

তিনি জানান, ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের ৩০ মে যশোর জেলার কোতোয়ালী মডেল থানাধীন পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়ায়। গ্রামটির বাসিন্দা মো. বজলুর রহমান পাঁকা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।

এজন্য তিনি আগে ভবনের প্রাচীর দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নেন। শ্রমিকরা মাটি খোঁড়ছিলেন। মাটি খোঁড়ার সময় পুরাতন টয়লেটের কুয়ার মাটির তৈরি রিং পাওয়া যায়।

ওইসব রিং সরাচ্ছিলেন শ্রমিকরা। সেগুলো সরানোর সময় কুয়ার ভেতরে একটি নীল রংয়ের প্লাস্টিকের ড্রাম দেখা যায়। ড্রামটি তোলার পর সেটি খোলা মাত্রই সবার চক্ষু চড়কগাছ। ড্রামের ভেতরে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি দেখা যায়। বিষয়টি মুর্হুতেই মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। যশোর জেলার পিবিআই টিমও সেখানে যায়। ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই।

পিবিআইয়ের যশোর জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার ও এ সংক্রান্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদারকি কর্মকর্তা রেশমা শারমিন জানান, তদন্তের এক পর্যায়ে রাজীব হোসেন কাজী (৩২) নামের এক ছেলের পরিবার তার কাছে আসে। রাজিবের পিতা মাতা জানান, তাদের ছেলে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ রাত ৮টা থেকে নিখোঁজ রয়েছে। রাজীবের পিতার নাম মো. ফারুক হোসেন। বাড়ি খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানাধীন চন্দোলি মহল গ্রামে। রাজীবের পরিবারের দাবি, রাজীব তার চাচা হাসমতের বাসা থেকে যশোর সদরের পুরাতন কসবার আবু তালেব সড়কের বাসিন্দা শেখ সজিবুর রহমানের (৩৪) বাসায় ও অফিসে কাজ করত।

রাজীবের মা মাবিয়া বেগম সজিবের কাছে ছেলে সর্ম্পকে জানতে চান। সজিব জানান রাজীব কোথায় যেন চলে গেছে, তিনি জানেন না। সজিব রাজিবকে উদ্ধার করতে মামলা করার পরামর্শ দেন। শেষ পর্যন্ত কোন খোঁজ খবর না পেয়ে রাজীবের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে থাকে তার পরিবার।

দেয়াল নির্মাণকালে ড্রামের ভেতরে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলী পাওয়ার খবর পান রাজীবের চাচা হাসমত। তিনি রাজীবের পরিবারকে খবরটি জানান। রাজীব যেখানে কাজ করতেন, যশোরের পুরাতন কসবার আবু তালেব সড়কের অফিসের কাছ থেকেই মানুষের কঙ্কাল পাওয়ার খবরে পাগলের মত ছুটে যান রাজীবের পিতা মাতাসহ পরিবারের সবাই। স্থানীয়রা জানান, রাজীব নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন পর সজীব তার অফিস ভেঙ্গে ফেলেন।

পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলছেন, সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। রাজীবের পরিবারের লোকজন আসায় তাদের শরীর থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে কঙ্কালের পরিচয় শনাক্ত করার উদ্যোগ নেই। নমুনা পাঠানো হয় সিআইডি ঢাকার মালিবাগ ফরেনসিক ল্যাবরেটরীতে। পরীক্ষা নিরীক্ষায় রাজীবের ডিএনএ-এর সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ মিলে যায়। নিশ্চিত হওয়া যায় কঙ্কালটি রাজীবের। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের যশোর জেলার উপপরিদর্শক (এস আই) মো. জিয়াউর রহমান জানান, তদন্তের ধারাবাহিকতায় এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের সূত্রধরে গত ১৬ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় মো. সালাম (৫৫) নামের একজনকে। তার পিতার নাম মৃত নুর মিয়া। বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানাধীন মঙ্গলহাটা গ্রামে। তিনি যশোরের কোতোয়ালী থানাধীন কিসমত নওয়াপাড়ার আবদার ড্রাইভারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে সালাম জানায়, আন্যান্য অসামীদের সহযোগীতায় রাজীবকে হত্যা করে। এরপর লাশ গুম করার জন্য ড্রামে ভরে তার রিক্সায় করে পুরাতন কসবার নিরিবিলি পাড়া শেখ সজিবুর রহমানের অফিসের টয়লেটের কুয়ায় ফেলে দেয়া হয়। সালামকে বুধবার যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালালের কাছে রাজীব হত্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। লাশ বহনে ব্যবহৃত রিকশাটি জব্দ হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

যাযাদি/এস এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে