লোহাগাড়ায় চাঞ্চল্যকর প্রবাসী হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন
শ্বাশুড়ি লাখ টাকায় ৪ ভাড়া করা খুনি দিয়ে হত্যাকরে মেয়ে জামাইকে
প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০২৩, ১১:০৫
লোহাগাড়ার পুটিবিলায় প্রবাসী মনছুর আলী (২৭) হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছাবের আহমদ (৫০) নামে এক ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৫ মার্চ) গভীর রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ছাবের আহমদ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব পহরচান্দা এলাকার ইবনে আমিনের পুত্র। তার স্বীকারোক্তি মতে ঘটনাস্থলের অদূরে একটি খাল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি দা উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা যায়, গ্রেফতার নিহত প্রবাসীর শ্বাশুড়ি ছায়েরা খাতুন, শালিকা রুমন্নান আক্তার, ভাড়াটিয়া খুনি ছাবের আহমদকে গত ১৫ মার্চ বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া তদন্তে নিহত প্রবাসীর স্ত্রী রিনা আক্তারের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাই তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী তদন্তে হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলায় অন্তর্ভূক্তিসহ পুনরায় গ্রেফতার করা হবে।
নিহতের ভাই খোরশেদ আলম বলেন, “বুধবার ময়নাতদন্ত শেষে মনছুর আলীর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। একইদিন সন্ধ্যায় নামাজে জানাজা শেষে তাকে সামাজিক করবস্থানে দাফন করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।”
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম জানান, নিহত প্রবাসীর শ্বাশুড়ি ছায়েরা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ভাড়াটিয়া খুনি ছাবের আহমদকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্য মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মেয়ের স্বামীকে হত্যা করতে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে ৪ ভাড়াটিয়া খুনি ভাড়া করেন শ্বাশুড়ি ছায়েরা খাতুন। গত ১ মার্চ শ্বশুরবাড়ি যান প্রবাসী মনছুর আলী। রাতে ওৎ পেতে থাকা ভাড়াটে খুনিরা শ্বশুরবাড়ির ভেতর দা দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর শ্বশুরবাড়ির থেকে আনুমানিক ৩শ’ গজ দূরে এক পাহাড়ি ঝিরিতে ওই প্রবাসীকে মাটিচাপা দেয় খুনিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত মনছুর আলীর সাথে তার শ্যালীকাকে কেন্দ্র করে শাশুড়ীর সাথে দন্দ চলে আসছিল। স্থানীয় অনেকেই জানান, ফেসবুকে মনছুর আলীর বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেয়াকে নিয়ে তাদের উভয় পরিবারে অন্তর্দন্দ লেগে যায়। অনেকে ফেসবুকে তাকে দেশে আসলে মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলেও জানা যায়। তবে তদন্তে এসব ভুয়া আইডি বলে সনাক্ত হলেও শেষে মনছুর আলী দেশে এসেই খুনের শিকার হন।
এ ব্যাপারে মামলা তদন্তকারী এসআই শরিফুল ইসলাম জানান, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে নিহত প্রবাসী মনছুর আলীর বিরোধ চলছিল। উক্ত বিরোধের জের ধরে শ্বাশুড়ির ভাড়া করা খুনিদের হাতে খুন হন মেয়ের স্বামী মনছুর আলী। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। উক্ত ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার পুটিবিলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পহরচান্দা ছোট ধলিবিলা হাসনা ভিটার পাহাড়ি টিলার এক ঝিরি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রবাসী মনছুর আলী একই ওয়ার্ডের পহরচান্দা সেকান্দার পাড়া এলাকার ফরিদ আহমদের পুত্র ও ২ সন্তানের জনক। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি দুবাই থেকে দেশে আসেন। পরদিন তিনি নিখোঁজ হন। উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড পহরচান্দা ছোট ধলিবিলা(হাসনা ভিটা) পাহাড়ী এলাকা থেকে গত ১৪ মার্চ বুধবার প্রবাসী মনছুর আলী প্রকাশ লেদুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় স্ত্রী রীনা আকতার, শ্যালিকা, রোম্মান আকতার, শ্বাশুড়ি ছায়রা বেগমকে আটক করা হয় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের সাথে জড়িত থাকায় শ্বাশুড়ি ও শ্যালিকাকে আটক করে চট্টগ্রাম আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এবং স্ত্রীকে জড়িত না থাকায় ছেড়ে দেয়া হয় ।
নিহত মনছুর আলীর শ্বাশুড়ি আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন যে,অর্থের লোভে পড়ে তার(প্রবাসী মনছুরের) টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য সে ৪জনকে ১লাখ টাকা দিয়ে তার মেয়ের স্বামী মনছুর আলীকে খুন করার জন্য ভাড়া করেছিল। ৪জন মিলে তাকে খুন করে শ্বশুর বাড়ির পাশে পাহাড়ীর ঝিরিতে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়।
যাযাদি/এস