দুই লাখ টাকার জন্য বন্ধুকে নির্মমভাবে খুন

প্রকাশ | ০৯ মে ২০২৩, ১০:৪২

গাফফার খান চৌধুরী
ফাইল ছবি

মাত্র দুই লাখ টাকার জন্য এক বন্ধুকে নির্মমভাবে খুন করেছে দুই বন্ধু। মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে দুই বন্ধু তাকে হত্যা করে। আলাপের এক পর্যায়ে এক বন্ধু খাতা সেলাই করার বড় সুই বন্ধুর বুকের বাম পাশে ঢুকিয়ে দেয়। অপর বন্ধু হাতুড়ি ও কাটার দিয়ে ওই পাশেই এবং শরীরে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করতে থাকে। হাতুড়ির আঘাতে বুকের হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ওই বন্ধুকে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পাওনা টাকা না দিতেই বন্ধুকে চিরতরে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয় তারা।  

ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. আব্দুল আহাদ জানান, গত ৫ মে বিকাল ৩টায় খিলক্ষেত থানায় ইকরাম হোসেন মোল্লা নামের এক যুবক হারানোর বিষয়ে একটি জিডি হয়। ইকরামের বাড়ি খিলক্ষেত থানাধীন ডুমনী এলাকায়। জিডিতে বলা হয়, গত ৪ মে রাত ১১টা থেকে ইকরামের কোনো সন্ধান মিলছে না। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে মাঠে নামে পুলিশ। 

সোমবার ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, জিডির পর থেকেই শিক্ষিত যুবক ইকরাম হোসেনের সন্ধানে সব ধরনের চেষ্টা চালানো হয়। এক পর্যায়ে ইকরামের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এদিকে নিখোঁজের পরদিনই ডুমনী এলাকার কাউন্সিলর গলি ছাড়িয়ে বালুচর এলাকায় একটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃতদেহটি ইকরামের বলে তার পরিবার শনাক্ত করে। ইকরামের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়া দু’জনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাটার, খাতা সেলাই করার বড়  সুই এবং একটি হাতুড়ি জব্দ হয়। 

এডিসি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গত ৭ মে শান্ত ঢাকা মহানগর আদালতে বিচারকের কাছে ইকরাম হত্যায় নিজের জড়িত থাকার স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। অপর আসামি সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সিদ্দিককে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শান্ত ও সিদ্দিক দু’জন বন্ধু। তারা একত্রে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। 
খিলক্ষেত থানার ওসি কাজী সাহান হক যায়যায়দিনকে বলেন, নিহত ইকরাম, শান্ত ও সিদ্দিক পরস্পর বন্ধু। এর মধ্যে সিদ্দিক ও শান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শান্তর সঙ্গে ইকরামের বন্ধুত্ব ছিল। সেই সুবাদে সিদ্দিকের সঙ্গেও নিহত ইকরামের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তারা তিনজন একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। তিনজনই ডুমনী এলাকার বাসিন্দা। বন্ধুত্বের সূত্র ধরে ইকরাম প্রায় ৮ মাস আগে ২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন শান্তকে। শান্ত টাকা দিয়ে বালুর ব্যবসা করছিলেন। কিন্তু ব্যবসা থেকে লাভের কিছু টাকা ইকরামকে দেওয়ার কথা থাকলেও, তা দিচ্ছিল না শান্ত। ইকরাম সম্প্রতি শান্তর কাছে টাকা ফেরত চায়। টাকা ফেরত চাওয়ার সূত্র ধরেই শান্তর সঙ্গে ইকরামের সম্পর্কের অবনতি হয়। 

ওসি আরও বলেন, সিদ্দিক অনেকটাই বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। বিষয়টি ইকরামের ভালো লাগেনি। এজন্য তিনি সিদ্দিকের মাকে বিষয়টি জানান। এমনকি সিদ্দিককে ভালোপথে চলার জন্য প্রয়োজনীয় শাসন ও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। এ নিয়ে সিদ্দিকের সঙ্গে তার মায়ের ব্যাপক ঝগড়া হয়। সিদ্দিক মনের কষ্টে পাঁচ দিন বাড়ির বাইরে থাকে। এতে করে ইকরামকে নিয়ে চরম ক্ষোভ জন্মে সিদ্দিকের মনে। 

ওসি বলেন, একদিকে শান্ত টাকা ফেরত না দেওয়ার চেষ্টা করছে। তার ওপর সিদ্দিক ইকরামের ওপর চরম ক্ষিপ্ত। এজন্য তারা দু’জনে মিলে ইকরামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ৪ মে শান্ত ফোন করে ইকরামকে। তাকে ডুমনী বালুচর এলাকায় যেতে বলে। ইকরাম সরল বিশ্বাসে সেখানে যান। এদিকে আগ থেকেই শান্ত ও সিদ্দিক ইকরামকে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খাতা সেলাই করার বড় সুই, হাতুড়ি ও কাটার নিয়ে যায়। 

ওসি কাজী সাহান হক আরও জানান, ইকরাম সেখানে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে টাকা পয়সা ও সিদ্দিকের মায়ের কাছে অভিযোগ দেওয়ার সূত্র ধরে তুমুল ঝগড়া ও হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় তারা খাতা সেলাই করার বড় সুই সিদ্দিকের বাম বুকে ঢুকিয়ে দেয়। একই সঙ্গে হাতুড়ি দিয়ে মারাত্মকভাবে বাম বুকে আঘাত করতে থাকে। বার বার আঘাতের কারণে বাম বুকের হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। আর কাটার দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করলে প্রচুর রক্তক্ষরণে ইকরাম দুর্বল হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। বালুচরেই ইকরামকে হত্যার পর লাশ পাশের বিলে ফেলে ওপরে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেয় হত্যাকারীরা। 

ওসি বলছেন, সামান্য দুই লাখ টাকার জন্য বন্ধুকে হত্যার করার বিষয়টি সত্যিই হৃদয়বিদারক। মূলত মাদকসেবনের পরেই সিদ্দিক ও শান্ত নির্মমভাবে বন্ধুকে হত্যা করেছে। প্রাথমিকভাবে তারা মাদকসেবনে অভ্যস্ত বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে সিদ্দিক মাদকসেবন করে বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। হত্যাকাণ্ডে আর কারও জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ মেলেনি। দুই দিনের রিমান্ড শেষে আগামী ১০ মে সিদ্দিককে ঢাকা মহানগর আদালতে সোপর্দ করার কথা রয়েছে।

যাযাদি/ এস