লাখাইয়ের বেদে সম্প্রদায়ের চলছে চরম দুর্দিন

‌'তোগো মতো আমাদেরও ক্ষুধার কষ্ট আছে'

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০২০, ১৭:১৮

মহসিন সাদেক, লাখাই (হবিগঞ্জ) থেকে

 

 

অবহেলিত ও অসহায় যাযাবর জনগোষ্টির লোকজনের মাঝে অন্যতম বেদে সম্প্রদায়। “বাইদ্য”  নামেই গ্রাম বাংলায়  যাদের পরিচিতি। বেদে সম্প্রদায়ের জীবনাচরণ নিয়ে বেশ কিছু কালজয়ী গান সহ সিনেমাও নির্মিত হয়েছে ইতিপুর্বে। যেই জনগোষ্টির লোকজন এক সময় গ্রামঞ্চলে মানুষের কাছে রহস্যময়ী হিসাবেই পরিচিত ছিলো । ভয়ংকর সব সাপ নিয়ে যাদের ছিলো খেলা ।

 

নিজের হাতের তৈরী কাঠ আর বাশের বীন বাজিয়ে সাপ খেলা দেখানো, সিঙ্গা লাগানো, দাতের পোকা বের করা, ভয় ও বিছানায় প্রস্রাবের তাবিজ বিক্রিসহ টোকটাক ভেলকি বাজীতে যারা ছিলো কৌতুলী মানুষের কাছে সমাদৃত।

 

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে স্থায়ীভাবে বেদে সম্প্রদায়ের কোন নিবাস না থাকলেও এক সময় বর্ষাকালে তারা দল বেধে নৌকা নিয়ে ভিড়তো এ পাড়া ও পাড়ায়, এখন আর সেই দৃশ্যও চোখে পড়েনা। তবে আজকাল বর্ষা মৌসুম ছাড়াও প্রায়ই বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরতে দেখা যায় বেদে সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মেয়েদের।

 

আধুনিক আর তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তন্ত্রমন্ত্রের বেশ কিছু রহস্য  উন্মোচিত হয়ে যাওয়ায় অন্য সব কৃষ্টিকালচারের মতো বেদে সম্প্রদায়ের সেই ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি আর পেশায় নেমেছে ধস।

 

আজকাল সাপের খেলা, ভয়ের তাবিজ, সাপের আতঙ্ক দিখিয়ে টাকা উপার্জন কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে বিচ্ছিন্ন এই ক্ষুদ্র জনগোষ্টির, সভ্যতার পরিবর্তনে  গ্রামের হাটবাজারে মজমা, দলবদ্ধ ভাবে সেজেগুজে পাড়া মহল্লায় সিঙ্গা লাগানো, দাতের পোকা বের করা, তাবিজ বিক্রি তেমন হয়না বেদে সম্প্রদায়ের । তাদের পেশাগত কাজের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়া সহ আকর্ষনীয় ও ভয়ংকর সব সাপের দুস্পাপ্যতাও এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন বেদেরা।

 

সময়ের আর্বতে বর্তমানে বেদে সম্প্রদায়ের পেশাগত জীবন ধারায়ও নেমেছে চরম দুর্দিন। বাধ্য হয়ে অনেকেই পুর্ব পুরুষের শিখানো ও দেখানো পথ ছেড়ে বেছে নিচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন পেশা। জীবন যুদ্ধে ঠিকে থাকতে এবং ক্ষুধার অন্ন জোগাড়ে বদলে গেছে তাদের পেশার ধরণ।

 

সরেজমিনে লাখাই উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে আজকাল বেদেদের বিচরণ বেশ চোখে পড়ে। বিভিন্ন কৌশলে হাটবাজারে আগতদের তারা কাছে তারা হাত পাতছে । কোন সময় স্বজনের বিয়ে, সাপের খাবারের জন্য অথবা অন্য কোন আবদারে তারা হাত বাড়াচ্ছে বাজারের আগত পথচারী, নারী পুরুষদের কাছে। কেউ ভয়ে, কেউবা আবার নাজেহালের লজ্জায় তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে যৎসামান্য অর্থ। কেউ কেউ সদরে দু’চার টাকা তুলে দিলে ও কেউ আবার বিপত্তিও ঘটাচ্ছে।

 

শুক্রবার উপজেলা স্থানীয় বুল্লাবাজারে একদল বেদে সম্প্রদায়ের সাথে এই প্রতিনিধির আলাপ হয়। তারা আক্ষেপের সাথে বলেন, পেটের তাগিদেই এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছি, মানুষজন আর আগের মতো আমাদের কাছে ভিড়েনা তাই এই ভাবে টাকা না নিলে না খাইয়া থাকতে হইবো। আমরা তো আর চুরি করিনা? হয়তো তগো মনে  কষ্ট দিয়া কয়টা টাকা নেই কিন্তু ভাই আমগোর এছাড়া এখন আর কিছু করা নেই, নিজের স্বামী সন্তানের পেটে এক বেলা ভাত জুটাতেই এখন তগো হাতে ধড়ি দুইডা টাকার জন্য, আমরাও তো তোগো মতো মানুষ আমাদেরও ক্ষুধার কষ্ট আছে।