ঝিনাইদহের ফুলের রাজ্যে আবার করোনার থাবা সৌন্দর্যের গোলাপ, গাঁদা খাচ্ছে গরু ছাগলে

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২১, ২০:৩৭

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

তিন বিঘা জমিতে গাঁদা আর দুই বিঘা জমিতে রজনিগন্ধা ফুলের চাষ করেছিলেন হোসেন আলী। প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ। ক্ষেতে সবেমাত্র ফুল ওঠা শুরু করেছিল। সপ্তাহে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার ফুল বিক্রিও করছিলেন। এভাবেই আরও তিন মাস ফুল বিক্রি করা যেত। কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনে সব বন্ধ হয়ে গেছে। ফুলচাষি হোসেন আলীর বাড়ি ঝিনাইদহের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামে। হোসেন আলী চলমান লকডাউনে ফুল বিক্রি করতে না পেরে দুই বিঘা গাঁদা ও এক বিঘা জমির রজনিগন্ধা ফুলের জমি চাষ করে দিয়েছেন। করোনার এ আবহাওয়া কবে স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত জেনেই অধিকাংশ জমির ফুল তুলে দিয়েছেন।

একইভাবে দুই বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছিলেন কৃষক আনোয়ার হোসেন। এক সপ্তাহ হলো ফুল বেচাকেনা বন্ধ। ফলে জমিতেই ফুল নষ্ট হচ্ছে। এদিকে ফুল তুলে ফেলে না দিলে গাছ মরে যাচ্ছে। গাছ থেকে একবার ফুল তুলে ফেলে দিতে প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয়। এক সপ্তাহে একবার ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিয়েছেন। এদিকে কবে ফুলের বাজার শুরু হবে তাও অনিশ্চিত। পকেটের টাকা খরচ করে এভাবে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে এখন ফুলগাছ তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে। এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে। এ ভাইরাসের কারণে ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। ফলে দেশের সব ফুলের বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন আরও জানান, এ বছর প্রায় ৭০ হাজার টাক খরচ করে এই চাষ করেছিলাম। যা করোনার কারণে সবই মাটি হয়ে গেল। এভাবেই বলছিলেন একই রকম অবস্থা জেলার হাজার হাজার ফুলচাষির। এ বছর ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ১৭৩ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে গাঁদা ১১৩ ও রজনিগন্ধা ২৪ হেক্টর এবং বাকি জমিতে অন্যান্য ফুলের চাষ হয়েছে। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর। প্রতিবছর সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদর উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে।

২০২০ সালের মার্চে দেশের করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার পর দেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। ফলে ফুল বিক্রিতে ধস নামায় জেলার ফুলচাষিদের অনেক লোকসান হয়েছিল। ফুল বিক্রি করতে না পারায় ফুলক্ষেত গরু ছাগল দিয়ে খাইয়ে দিয়েছিল। করোনার প্রভাব কিছুটা কমে আসায় আবারও চাষিরা নতুন করে ফুলের চাষ শুরু করেন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে সবেমাত্র ফুল বিক্রি শুরু করেছিলেন। কিন্তু এবারও করোনার কারনে সরকার লকডাউন ঘোষণা করায় সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

ফুল চাষী শফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর করোনার আগে প্রায় দুই বিঘা জমিতে গরম জাতের গাঁদা ফুল ছিল। লকডাউনে পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ক্ষেতের ফুল তুলে একেবারেই বাজারে বিক্রি করতে পারছিলাম না। যার কারণে সব গাছ কেটে ফেলি। এতে আমার লোকসান হয় দেড় লাখ টাকার মতো। এবার আবার সে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে গাঁদা ফুল চাষ করেছিলাম কিন্তু আবারও করোনা আমাদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।

 

যাযাদি/এস