মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর একেবারেই সন্নিকটে। ঈদের আগে আর মাত্র দুদিন ব্যাংকে লেনদেন হবে। তাই প্রয়োজনীয় লেনদেন সারতে রোববার (৯ মে) ব্যাংকে ব্যাংকে ছিল গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড়। টাকা তোলা ও জমা দিতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করেছেন গ্রাহকরা। ব্যস্ত সময় পার করেছে ব্যাংকাররাও।
রোববার রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলো ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। ব্যাংকগুলোতে সকাল থেকেই ক্যাশ কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন লক্ষ্য করা গেছে। লেনদেনের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন সেবার বিল জমা দেওয়ার লাইনও ছিল চোখে পড়ার মতো। অতিরিক্ত গ্রাহকের চাপে ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারের কর্মকর্তাদের বেশ চাপ মোকাবিলা করতে হয়েছে। অনেক জায়গায় পড়তে হয়েছে সার্ভার সমস্যায়ও।
অতিরিক্ত গ্রাহকের চাপে সার্ভার সমস্যায় লেনদেন বিঘ্নিত হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে। গত বৃহস্পতিবার থেকেই এ ব্যাংকের সার্ভারে ঝামেলা হচ্ছে। তবে রোববার এ সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করে।
বিষয়টি স্বীকার করে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শামসুল ইসলাম বলেন, ‘সার্ভারের সমস্যার কারণে লেনদেন বিঘ্নিত হচ্ছে। আমাদের সার্ভারটি অনেক পুরোনো। সার্ভার আপগ্রেডেশন করতে যাচ্ছি। আমাদের সার্ভারটি ৯ ভার্সনে রয়েছে। এটা ২১-এ কনভার্ট করব। কিন্তু কোভিডের কারণে আমাদের ফরেন টেকনিক্যালসরা আসতে পারছেন না। এ কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে এ সমস্যাও হতো না। হঠাৎ অনেক কাস্টমার বেড়ে গেছে। সাধারণ দিনের তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি গ্রাহক। আগে সাধারণ সময় আমাদের লাখ খানেক ভাউচার হতো। সেখানে এখন সোয়া তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ ভাউচার হচ্ছে। সবাই এক সঙ্গে এন্ট্রি দেওয়ার কারণে চাপ বেশি পড়ছে। তবে এটি বড় কোনো সমস্যা নয়, একসঙ্গে সবাই এন্ট্রি করতে গেলে সার্ভার একটু স্লো হয়ে যাচ্ছে।’
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি জানান, ব্যাংক খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। কিন্তু গ্রাহক সকালে বেশি আসছে। অনেকে জানেন না ২টা পর্যন্ত লেনদেন চলছে। গ্রাহক যদি একসঙ্গে সকালে না এসে সুবিধামতো সময়ে আসে তাহলে এই সমস্যাগুলো হবে না। আর নতুন সার্ভার আপগ্রেডেশন হলে এ সমস্যা চলে যাবে।
মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মো আব্দুল ওয়াহাব জানান, আজকে সকাল থেকেই গ্রাহকের অনেক ভিড়। স্বাভাবিক দিনের চেয়ে আজকে প্রায় তিন-গুণ বেশি লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে গ্রাহক টাকা উত্তোলন বেশি করেছে। ঈদে লোকজন গ্রামে টাকা পাঠাবে আবার অনেকে কর্মীদের বেতন বোনাস দেবে। সবমিলিয়ে, ঈদ উপলক্ষে ব্যবসায়ীক ও নিজস্ব প্রয়োজনে টাকা উত্তোলন করছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে ডিপোজিটের অর্থ জমা করছেন। বিভিন্ন বিলও জমা দিয়েছেন অনেকে।
তিনি বলেন, ‘সবমিলিয়ে সকাল থেকে বাড়তি গ্রাহককে সেবা দিতে আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা হিমশিম খাচ্ছেন। তবে নগদ টাকার কোনো সমস্যা নেই। গ্রাহকের চাহিদামতো টাকা দেওয়া হচ্ছে।’
অগ্রণী ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়ানো তোফায়েল বলেন, ‘আমাদের মনিহারি হোলসেলের (পাইকারি) প্রতিষ্ঠান। ঈদে কর্মীদের বেতন বোনাস দিতে হবে। তাই টাকা তুলতে এসেছি। আজকে অনেক ভিড়। এরপর আবার সার্ভার সমস্যা হয়েছে। দুই ঘণ্টা হয়েছে এসেছি। এখনো টাকা তুলতে পারিনি।’
যাযাদি/এসআই