বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

​ ১৯ দিনে ১৩ হাজার কোটি টাকা পাঠালেন প্রবাসীরা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ জুলাই ২০২১, ১৯:৩৬

কোরবানির ঈদের আগে ১৯ দিনে ১৫৫ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ১৩ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

এর মধ্য দিয়ে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতেও উল্লম্ফন দেখল বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক।

করোনা মহামারির মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনই আসেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানির ঈদের আগে পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনীয় কেনাকাটার বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সে কারণেই ঈদের ছুটির আগে ১৯ দিনেই দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

এই উল্লম্ফন মহামারি মোকাবিলা করতে সরকারকে ‘সাহস’ জোগাচ্ছে বলে জানান তিনি।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে গত অর্থবছরে, যা কল্পনারও বাইরে ছিল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা এই কঠিন সময়ে বেশি বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন।’

এই ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্সে ১ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি জুলাই মাসের ১৯ দিনে (১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই) প্রবাসীরা মোট ১৫৫ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার (১.৫৫ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এর আগে কোনো মাসের ১৯ দিনে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনই আসেনি।

এই রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৪২ লাখ ডলার।

বেসরকারি ৪০ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার। আর বিদেশি ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার।

২১ জুলাই বুধবার কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। তার আগে ১৯ জুলাই মঙ্গলবার ছিল ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস।

মহামারির মধ্যে গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে; ওই মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পাঠান প্রবাসীরা, যা এক মাসের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে মে মাসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসেই ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স এসেছে। গড় হিসাবে প্রতি মাসে ২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার করে এসেছে।

তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি।

মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমার আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহে ভাটা পড়ে।

ওই মাসে ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এরপর আর রেমিট্যান্স কমেনি, প্রতি মাসেই বেড়ে চলেছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে কমবে ২০ শতাংশ।

তবে ২০২০ সাল শেষে দেখা যায়, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

পরে অবশ্য বিশ্বব্যাংক তাদের অবস্থান থেকে সরে আসে। মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ার ছয়টি কারণ খুঁজে বের করে এই সংস্থাটি। কারণগুলো হচ্ছে, সঞ্চয় দেশে পাঠানো, বৈধ পথে অর্থ প্রেরণ, পরিবারের প্রতি সহানুভূতি, নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, কর ছাড় বা আর্থিক প্রণোদনা এবং বড় দেশের প্রণোদনা অর্থ।

গত ১৩ জুলাই এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, ২০২০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি কমলেও দক্ষিণ এশিয়ায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় সরকার।

তবে, ঈদের ছুটির আগে অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্সে ১ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিতে সরকারকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩০০-এর বেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসে। একেক দেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ একের ধরনের ফি বা চার্জ নিয়ে থাকে। এটি সমন্বয় করা কঠিন।

তাই প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ মার্কিন ডলার কিংবা এর চেয়ে কম রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের বিদ্যমান ২ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও ১ শতাংশ প্রণোদনা দিলে যারা কম আয় করেন, সেই প্রবাসীদের খুব উপকার হবে।

রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

গত ২৯ জুন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪৬ বিলিয়ন (৪ হাজার ৬০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মেয়াদের বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

গত কয়েক দিনে তা বেড়ে ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

যাযাদি/এসআই

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে