শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ক্ষতি’ পোষাতে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা?

যাযাদি ডেস্ক
  ১১ অক্টোবর ২০২১, ২০:৪২
আপডেট  : ১১ অক্টোবর ২০২১, ২১:৪৯

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে কিছু পণ্যের দাম বাড়ার পিছনে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা বললেও তা ধোপে টেকে না।

শেষ পর্যন্ত তারা বলেছে,"করোনায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে এখন তা না পুষিয়ে নিলে কীভাবে হবে।”

উদাহরণ হিসেবে ভোজ্য তেলের কথাই ধরা যাক। সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪২-৪৯ ভাগ। খোলা বাজারে সয়াবিন তেলের (খোলা) লিটার এখন ১৬০ টাকা। চলতি বছরে দফায় দফায় দাম বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলে। তাই কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন৷ তার মতে এখন বাজারে যে ভোজ্য তেল তা তিন মাস আগে আমদানি করা। তাহলে এখন আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিল রেখে কেন সয়াবিনের দাম কেন বাড়ানো হবে? জবাবে ব্যবসায়ীরা বলছেন,"আমরা করোনায় অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছি। সেই ক্ষতি তো পোষাতে হবে। ক্ষতি না পেষালে আমরা টিকব কীভাবে?”

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের(টিসিবি) হিসেবে গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে শতকরা ৬.৭৮ভাগ, আটা ১৩.৫, ময়দা ৩০, সয়াবিন ৪৯, পাম ৫২, চিনি ২৬, মশুর ডাল ২৯, রসুন ৪১, পেঁয়াজ ৪২ ভাগ।

বাজারে এখন মিনিকেট কেজি ৭৫ টাকা, মোটা চাল ৫৪, আটা ৪০, ময়দা ৪৫ , মশুর ডাল(দেশি) ১৪০, পেঁয়াজ ৯০, সয়াবিন(খোলা) ১৬০ টাকা।

ক্যাব-এর দেয়া ২০১৯ এবং ২০২০ সালের বাজার দর মেলালে দেখা যায়, ২০১৯ সালে মিনিকেট চালের কেজি ছিলো ৫৪ টাকা , ২০২০ সালে ৬২ টাকা। মোটা চাল ২০১৯ সালে ৪০ টাকা, ২০২০ সালে ৪৮ টাকা। মশুর ডাল ২০১৯ সালে ৯৯ টাকা, ২০২০ সালে ১২৮ টাকা। ২০১৯ এ পেঁয়াজ (দেশি) ৮৮ টাকা, ২০২০ সালে ১০০ টাকা। ২০১৯ সালে সয়াবিন ৮৮ টাকা, ২০২০ সালে ১০১ টাকা লিটার।

এদিকে টিসিবি যে বাজর দর প্রকাশ করে তার সাথে বাস্তবের মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। টিসিবি ১১ অক্টোবরের যে বাজার দর দিয়েছে তাতে বাজারে এখন মিনিকেট( সরু চাল) কেজি ৫৫.৬৬ টাকা, মোটা চাল ৪৫, আটা ৩৩.৩৫, ময়দা ৪৩.৩৫ , মশুর ডাল ১৪০, পেঁয়াজ ৭০, সয়াবিন ১৩৫ টাকা। তাদের হিসাবে অধিকাংশ ভোগ্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে।

বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে শতভাগ বেড়েছে। ৪৫ টাকার পেঁয়াজ এখন ৯০ টাকা।

এসএম নাজের হোসেনের কথা, পেঁয়াজ আমদানি ভারত থেকে বন্ধ হয়নি। পূজার সময় কয়েকদির বন্ধ থাকবে। তাহলে দেশি পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ল? দেশে তো পেঁয়াজের কমতি নেই। এখানে সিন্ডিকেট স্পষ্ট। তিনি বলেন,"দেশে চিনি আমদানি করে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান, ভোজ্য তেল আমাদানি করে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। চাল জিম্মি চালকল মালিকদের হাতে। ফলে তারা যেভাবে দাম নির্ধারণ করে সেভাবেই হয়। আর তাদের দেখাদেখি সবজি, মাছ, মাংসের দামও বেড়ে যায়। তারা মনে করে তারা যখন বাড়াচ্ছে আমরাও একটু বাড়াই।”

ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সিন্ডিকেট ও চেইন রিঅ্যাকশনের কথা জানান সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন,"ভোজ্যতেলসহ আরো কিছু পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নেয়। প্রথমত আন্তর্জাতিক বাজারে যে দাম বাড়ে তার তুলনায় তারা বেশি বাড়িয়ে দেয়। আবার ধরেন, এখন দাম বাড়লে তারা এর সুযোগ নিতে আগে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এইসব পণ্যের আমদানি নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা এটা করতে পারে।”

তিনি বলেন,"এর ফলে যা হয় দেশে উৎপাদিত পণ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। দুই ধরনের পণ্য আছে। পচনশীল যেমন: শাক সবজি, মাছ আর কিছু আছে পচনশীল নয়। এই দুই ধরনের পণ্যের দামই বাড়িয়ে দেয়া হয়। কারণ তাদেরও তো আমদানি করা ভোগ্যপণ্য কিনে খেতে হয়। আর সবাই দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করলে তারা করবে না কেন?”

আর করোনার পর মানুষের ভোগ বেড়ে যাওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে তাতেও কিছুটা দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। কিন্তু সেটা মূল কারণ নয় বলে মনে করেন তিনি।

তবে ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা দাবি করেন,"আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই ভোজ্য তেল, চিনির দাম এখানে ঠিক করা হচ্ছে। সরকার ট্যাক্স বেশি নেয়, ট্যাক্স কমালে দাম কমবে। ব্রাজিলের চিনির দাম বাড়লে এখানেও বাড়বে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আজকের(সোমবার) বৈঠকে আমরা বলেছি তাদের অনুসন্ধান করে দেখতে যে আমরা দাম বেশি নিচ্ছি কী না।”

তার দাবি,পেঁয়াজের দাম তারা ৫৫ টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু অলিগলির দোকানে বেশি নিলে তাদের কিছু করার নেই।

আর শাক সবজির দাম বাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন,"শীতকালে আম খেতে চাইলে দাম তো বেশি দিতেই হবে। সামনে শীত আসছে তখন শাক-সবজির দাম কমে যাবে।”সূত্র: ডয়চে ভেলে

যাযাদি/এসআই

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে