​তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় প্রণোদনার ফাঁদ

প্রকাশ | ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:৫৬

যাযাদি রিপোর্ট

 

ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫-এর বিভিন্ন দুর্বল দিকসমূহ ও তামাক কোম্পানির অনৈতিক বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্য প্রদর্শন ও ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁয় ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থানের জন্য লোভনীয় প্রণোদনা দিয়ে থাকে। সম্প্রতি বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংগঠন ভয়েসেস ফর ইন্টারেক্টিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস) তামাক কোম্পানির উল্লিখিত অনৈতিক ক‚টকৌশল ও ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে দুটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।

 

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) সহযোগিতয় সিরডাপ মিলনায়তনে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অসীম কুমার উকিল এমপি; হোসেন আলী খোন্দকার, অতিরিক্ত সচিব এবং সমন্বয়কারী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল; মোস্তাফিজুর রহমান, লিড পলিসি অ্যাডভাইজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস; প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মনজুরুল আহসান বুলবুল, এডিটর ইন চিফ, টিভি টুডে এবং অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ।

 

গবেষণায় পাওয়া যায় যে, তামাক কোম্পানিগুলো তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে তামাক বিক্রয়কে উৎসাহিত করে। তারা বিভিন্ন কৌশল যেমন পণ্য বিক্রয়ের ওপর লক্ষ্যমাত্রা প্রদান, সেরা বিক্রেতাদের নাম তামাক কোম্পানির বিশেষ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রী প্রদান এবং প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সরঞ্জাম যেমনÑ বিছানা, আলমিরা, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, বেøন্ডার  ইত্যাদি এবং বিলাসসামগ্রী সোনার কয়েন, এলইডি টিভি, এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজ এবং দামি গিফট ভাউচার ইত্যাদি দিয়ে থাকে। এছাড়াও বিএটি এবং জেটিআই উভয়ই ডিলার, পাইকার এবং খুচরা বিক্রেতাদের উৎসাহ প্রদানের জন্য উদযাপনমূলক ডিনার এবং দেশে-বিদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকে।

 

জরিপকৃত সমস্ত রেস্তোরাঁয় ‘আলোকিত রঙিন সজ্জিত বাক্স’ (যার ভেতর সিগারেটের খালি প্যাকেট) বিজ্ঞাপনের উপকরণ হিসেবে প্রদর্শিত হতে দেখা গেছে। যার সবগুলোতেই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ এর সাইন/লোগো পাওয়া গেছে। শতকরা ৭৩ ভাগ রেস্তোরাঁয় ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকায়, শতকরা ২৭ ভাগ রেস্তোরাঁর প্রবেশ/প্রস্থান পথে এবং রেস্তোরাঁর খাবার পরিবেশন টেবিলের কাছে বিজ্ঞাপন সামগ্রী প্রদর্শিত হচ্ছে। এই বিজ্ঞাপন সামগ্রী প্রদর্শনের জন্য তামাক কোম্পানি রেস্তোরাঁর মালিকদের এককালীন নগদ আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে। রেস্তোরাঁর অবস্থান অনুযায়ী যার গড় পরিমাণ আট লাখ টাকা, সর্বোচ্চ পনেরো লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন চার লাখ টাকা এবং এই নগদ সুবিধা ব্যাংক চেক এবং ব্যাংক ট্রান্সফার এই দুই মাধ্যমে দেওয়া হয়। এই সুবিধা নেওয়ার সময় ৬০% রেস্তোরাঁ লিখিত চুক্তি করেছে এবং ৪০% মৌখিক চুক্তি করেছে।

 

গবেষণায় আরও জানা যায়, রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের উপহার পেয়ে থাকে। যেমন: টি-শার্ট, লাইটার, অ্যাশ ট্রে, রান্নার জিনিস, কফি মগ, তামাকজাত দ্রব্য, কম দামে তামাকজাত দ্রব্য, প্লেট/গøাস, কোভিড প্রতিরক্ষামূলক সামগ্রী, নতুন সিগারেট ব্র্যান্ডের বিনামূল্যে নমুনা ইত্যাদি।

 

যাযাদি/এস