খাগড়াছড়ির ফুলের ঝাড়ু পাহাড়ের চাহিদা পুরন করে যাচ্ছে দেশ বিদেশে
প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০২২, ১৭:৫৯
খাগড়াছড়ির ফুলের ঝাড়ু পাহাড়বাসীর চাহিদা পুরন করে যাচ্ছে দেশ-বিদেশে। আর এ (উলুফুল) ফুলঝাড়ু সংগ্রহে ব্যাস্থ সময় পার করছেন পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন। পাশাপাশি কাজ করছেন বাঙালি জনগোষ্ঠীর লোকজনও। বিক্রি করছেন স্থানীয় বাজারগুলোতে। এছাড়া পাইকার ব্যবসায়ীদের হাত ধরে সেসব ফুলঝাড়ু ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়।
প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ফুলঝাড়ু পাহাড়ে আর্থিক সচ্ছলতার দুয়ার খুলে দিয়েছে। পাহাড় ছাড়িয়ে এ ফুলঝাড়ু বাজার তৈরি করে নিয়েছে সমতলে। যাচ্ছে বিদেশেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাকৃতিকভাবে গজানো বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ উলুফুল (ফুলঝাড়ু)। বিশেষ করে পাহাড়ের ঢালুতে এ ফুলের বিস্তার হয়ে থাকে। একটি গাছ থেকে একটি মাত্র ফুল দেওয়ার পর গাছটি মারা যায়। কিন্তু বৃষ্টি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোঁড়া থেকে নতুন গাছের জন্ম হয়।
স্থানীয়ভাবে উলুফুল, চাকমা ভাষায় চড়ন্দরা, ত্রিপুরা ভাষায় চন্দ্রা বলা হলেও সারাদেশে ফুলঝাড়ু বা ঝাড়ুফুল নামেই পরিচিত। প্রতিবছর শীতের শুরুতে ফুল আসতে শুরু করে আর শীতের শেষেই পাহাড় থেকে এ ফুল সংগ্রহ করেন স্থানীয়রা।
পাহাড়ের ঢালুতে অনেকটা অবহেলায় জন্মালেও গত কয়েক বছরের ব্যবধানে সারাদেশে উলুফুলের ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। পাহাড় থেকে এ ফুল সংগ্রহ থেকে শুরু করে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
গুইমারার বড়পিলাকের ধনিরাম ত্রিপুরা, পানছড়ির মালতি চাকমা আর হাফছড়ির লাব্রেচাই মারমা পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। এ থেকেই চলে তাদের সন্তানের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয়। এদের মতোই পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনেকেরই আয়ের উৎস ফুলঝাড়ু। তাদের পাশাপাশি বাঙালি জনগোষ্ঠীর লোকজনও এ ফুল সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করছেন।
ফুলঝাড়ু সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে পাহাড়ের হাজারো বাসিন্দা জড়িত জানিয়ে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির মাইসছড়ির বাসিন্দা চাবাই মারমা বলেন, ফুলঝাড়ু পাহাড়ের মানুষের বাড়তি আয়ের পথ খুলে দিয়েছে। অনেকেই গভীর জঙ্গল থেকে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন।
৭-১০টি ফুলে একটি আঁটি। আর এমন একটি আঁটি বাজারে বিক্রি হয় ২৫-২৭ টাকায়। এভাবেই ১০০ আঁটি ফুলঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়। সপ্তাহে অন্তত ১০০ আঁটি ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করতে পারে অনেকেই এমনটাই জানিয়েছেন দীঘিনালার সাত মাইল এলাকার বাসিন্দা মনো বিকাশ ত্রিপুরা।
তিনি বলেন, অনেকেই এক মৌসুমে পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা ফুলঝাড়ু বিক্রি করে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। পুঁজি দিয়ে কৃষি কাজের চেয়ে বিনা পুঁজিতে বছরে চার মাস ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করা অনেক বেশি লাভজনক।
খাগড়াছড়ি, পানছড়ি, দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা ও গুইমারাসহ বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে ফুলঝাড়ুর আড়ত ও মাঠ। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা এসব আড়ত ও মাঠে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ফুলঝাড়ু। সেখানেই স্থানীয় বাজার ও বিভিন্ন পাহাড়ি পল্লী থেকে সংগ্রহ করা ফুলঝাড়ু প্রখর রোদে শুকানো হচ্ছে। প্রায় ১৫ দিন শুকানোর পর এসব ফুলঝাড়ু পাইকারের হাত ধরে যাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বড় বড় জেলা শহরে।
স্থানীয় বন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাকৃতিক উৎপাদিত এ ফুলঝাড়ু বিক্রি করে আয়-রোজগারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে ফুলঝাড়ু ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহতভাবে জুম চাষের কারণে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ফুলঝাড়ু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে মোটা অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আর কর্মসংস্থান হারাচ্ছে পাহাড়ের শ্রমজীবী মানুষ।
ফুলঝাড়ুর বাণিজ্যিক চাষে সরকারি উদ্যোগের কথা জানিয়ে ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে ফুলঝাড়ুর বাণিজ্যিক চাষ সম্ভব। বাণিজ্যিক চাষের উদ্যোগ নেওয়া হলে ফুলঝাড়ু বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলে পরিণত হবে। পাশাপাশি দেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে নতুন পরিচিতি এনে দেবে।
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারলে স্থানীয়রা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি সরকারি রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
খাগড়াছড়ি বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবু রাম চাকমা ফুলঝাড়ুর বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে দবলেন, ফুলঝাড়ু সংগ্রহ ও বিক্রির মাধ্যমে পাহাড়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। শুধুমাত্র পাহাড়ের নিম্নআয়ের মানুষই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে না সরকারও প্রতি বছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় করছে।
যাযাদি/এস