বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আরও অস্থির হয়ে উঠছে ভোজ্যতেলের বাজার

ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই বাড়ল দাম হ পাইকারি বাজারে পাম তেলের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১৫০ টাকা হ ডিলারদের তেল সরবরাহ না করার অভিযোগ
আহমেদ তোফায়েল
  ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০৯:১৮

পাম তেল বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত উদ্ভিজ্জ তেল। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাম তেল উৎপাদন করে ইন্দোনেশিয়া। বিশ্ববাজারে সরবরাহের অর্ধেক তারাই জোগান দেয়। শুক্রবার ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। দেশটির রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় ভোজ্যতেলের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠেছে। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে রাতারাতি পাম তেলের পাইকারি দাম ১৫০ টাকা মণ (৩৭.৩২ কেজি) বেড়ে ৬ হাজার ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। ঢাকার খুচরা বাজারে গতকাল পাম তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪২ থেকে ১৪৫ টাকা। চট্টগ্রামের পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল আলিম বলেন, ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে এমন খবরে ডিলার ও মিল মালিকরা গত এক মাস ধরে পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে অসাধু ডিলার ও ব্রোকাররা চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের মালিক মনোয়ার হোসেন বলেন, 'তারা সরকার নির্ধারিত দামেই ভোজ্যতেল বিক্রি করছেন। তবে, ডিলাররা গত কয়েক দিন ধরে কোনো তেল সরবরাহ করছেন না। ডিলাররা বলছেন, চাহিদার বিপরীতে তারা মিলারদের কাছ থেকে তেল পাচ্ছেন না। একই বাজারের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা আবুল কাশেম জানান, গত এক সপ্তাহে তারা ডিলারদের কাছ থেকে অল্প পরিমাণেই ভোজ্যতেল পেয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে ডিলাররা সাপস্নাই কম বলছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালে ২১ লাখ টন পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়। যার মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ টন রয়েছে পাম তেল। ওই সময় ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ৯ লাখ টন পাম তেল আমদানি হয়েছিল। ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে পাম তেল ও সয়াবিন তেলের আমদানির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২২ হাজার টন। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের তীব্র সংকট রয়েছে। বিশেষ করে লুজ সয়াবিন তেলের। ফলে পাইকারি বাজারে লুজ ভোজ্যতেলের দাম আরও বেড়েছে। রোববার মৌলভীবাজারে পাইকারি বাজারে মণপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৬ হাজার ৭০০ টাকায়। যা কয়েক দিন আগেও ছিল ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ৬০০ টাকা। হাশেম বলেন, এ ছাড়া বাজারে বোতলজাত তেলের সরবরাহ কম। চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে টিকে গ্রম্নপের ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন্স ডিরেক্টর মো. শফিউল আতাহার তসলিম বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠান বাজারে তেলের সরবরাহ কমায়নি। বাজারে তেলের কোনো ঘাটতি নেই। রাজধানীর ফার্মগেটের মুদি বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, এক লিটার তেল বিক্রি করলে ২ টাকা লাভ থাকে। তার ওপর কোম্পানির কাছে অর্ডার করলে ঠিকমতো সাপস্নাই দেওয়া হচ্ছে না। পাইকারি বাজার থেকে কিনে আনলে পরিবহণ খরচ মিলিয়ে উল্টো লোকসান দিতে হয়। তাই তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সেই প্রভাব দেশের বাজারে পড়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দামের তুলনায় আমাদের দেশের বাজারের দাম এখনো কম আছে। জেনেছি আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির হওয়ায় বর্তমানে অনেক ব্যবসায়ী আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। তাই বাজারে সরবরাহ সংকট হচ্ছে বলে তার ধারণা। ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। দেশটির এই পদক্ষেপের কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাম তেল বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত উদ্ভিজ্জ তেল। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাম তেল উৎপাদন করে ইন্দোনেশিয়া। বিশ্ববাজারে সরবরাহের অর্ধেক তারাই জোগান দেয়। এই তেল কেক থেকে শুরু করে প্রসাধনসামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়। ফলে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়াজাত খাবারের দাম বেড়ে যেতে পারে। শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো তিনি নিজ দেশে খাদ্যপণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার কথা বলেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি হওয়ায় তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। এ বছর বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত পাম তেলের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ বেড়েছে। কারণ শীর্ষ উৎপাদক দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় উৎপাদন কমেছে। পাশাপাশি জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানির ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে, যা মার্চ মাসে তুলে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাম তেল রপ্তানিকারী দেশ মালয়েশিয়ার উৎপাদনকারীরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে শ্রমিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তাদের উৎপাদন কমে গেছে। আর এই ঘাটতি পোষাণোর সম্ভাবনাও কম। ২০১৮ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়া নতুন করে পাম তেলের বাগানের জন্য অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করেছে। অভিযোগ, এসব বাগান করতে গিয়ে বন উজাড় করা হয়েছে এবং ওরাংওটাংসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়েছে। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় রান্নার তেলের দাম বেড়েছে। এতে দেশটির অনেক শহরেই গণবিক্ষোভ হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সরকার রান্নার তেলের দাম লিটারে এক ডলারের কম নির্ধারণ করে দেয়, যদিও বাজারে তা ১ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে