দেশীয় কৃষকদের কথা বিবেচনায় ৬ মে থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করেছে সরকার। এর প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে প্রায় ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, চাহিদার চেয়ে পর্যাপ্ত মজুত সত্ত্বেও সরবরাহকারীদের কৃত্রিম সংকটের কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ রয়েছে যথেষ্ট, এই মুনাফার কোনো অর্থই পাচ্ছে না কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গত ৬ মে থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানি স্থগিত করে, এই আশঙ্কায় যে, স্থানীয় পেঁয়াজ বাজারে আসায় আমদানি অব্যাহত থাকলে তা দামে মারাত্মক পতন ঘটাবে, যা কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাবই বেশি পড়েছে। গত সপ্তাহেও পাইকারি বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ২২-২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, যা গত শুক্রবার ৫০-৬০ শতাংশ বেড়ে ৩৫-৩৮ টাকা এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫০ টাকা দরে। যদিও বাজারগুলোতে ইতোমধ্যে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি আমদানিকৃত পেঁয়াজের আধিপত্যে কমছে। তবে দাম বৃদ্ধির আগেই কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে এই পেঁয়াজ সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। রোববারও দেশীয় জাতের পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকার ওপর বিক্রি হলেও এই বাড়তি দামের মুনফার কিছুই পাচ্ছে না কৃষকরা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতে, বাংলাদেশ বছরে প্রায় ২৬-২৭ লাখ টন পেঁয়াজ ব্যবহার করে, যার মধ্যে ২২-২৩ লাখ টন দেশেই উৎপাদন হয়। বিপুল পরিমাণ এই পেঁয়াজের সঠিক মূল্যে পেতেই বন্ধ করা হয় পেঁয়াজের আমদানি। কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি বন্ধ থাকায় মোকামগুলো সরবরাহ সংকটের অজুহাতে দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদার সুশীল চন্দ্র যায়যায়দিনকে জানান, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০-৪৫ ট্রাক পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। তবে আমদানি বন্ধ থাকলেও বাজারে প্রায় সব ব্যবসায়ীর কাছে অন্তত: এক মাসের পেঁয়াজ মজুত রয়েছ। যার বড় অংশই দেশীয় পেঁয়াজ। যদিও এই পেঁয়াজের বড় অংশই গত মাসের শুরুতেই সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিকে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজ ছাড়াও, ডিম, মসুর ডাল, রসুন এবং অন্যান্য পণ্যের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে অনেকটাই বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখন বাজারে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। তবে দাম আরও বাড়তে পারে- এই শংকায় অনেকেই প্রয়োজনের বেশি পেঁয়াজ কিনছেন, ফলে পণ্যের চাহিদার সঙ্গে দামও বাড়ছে। এদিকে কারওয়ান বাজারে কুষ্টিয়া থেকে পেঁয়াজ নিয়ে আসা এক ব্যবসায়ী জানান, সেখানকার স্থানীয় একটি মোকাম থেকে তিনি পাইকারিতে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। যা গত সপ্তাহেও ২২ টাকা ছিল অথচ এই পেঁয়াজ কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ১৫-১৭ টাকা কেজি দরে অন্তত এক মাস আগে সংগ্রহ করেছেন। কৃষক দাম না পেলেও ঠিকই স্থানীয় সংগ্রাহক ও মোকাম মালিকরা বাড়তি মুনাফা করছেন। তাদের তথ্যমতে, স্থানীয় মোকামগুলোতে প্রায় দুই মাসের চাহিদার সমপরিমাণ পেঁয়াজের মজুত রয়েছে। ব্যবসায়ীর সূত্র ধরেই কথা হয় কুষ্টিয়ার পেঁয়াজ চাষি জয়নাল মুন্সির সঙ্গে। তিনি জানান, তিন বিঘা জমিতে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে এবার পেঁয়াজ চাষ করেন তিনি ও তার বড় ভাই। তবে ২০-২৫ দিন আগে ক্ষেতের প্রায় ৮০ ভাগ অর্থাৎ ৭০ মণ পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করেছেন। সে সময় বাজার দর কম থাকায় মাত্র ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এখান থেকে আয় হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার টাকার কিছু বেশি। বাকি পেঁয়াজ তিনি বীজ ও নিজেদের ব্যবহারের জন্য রেখে দিয়েছেন। \হজয়নাল মুন্সি জানান, তার মতো অবস্থা এখানকার বেশির ভাগ কৃষকের। এ ছাড়াও এখন যারা সংরক্ষণকৃত পেঁয়াজ বিক্রি করতে চাচ্ছেন, তা নিতে মোকামের তেমন আগ্রহ নেই। কারণ, তারা আগেই কম দামে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে রেখেছেন। ফলে বাধ্য হয়ে আশাপাশের জেলাগুলোর মোকামে ১৮-২০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন কৃষকরা। যদিও এসব পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকার ওপর। এ ছাড়াও কৃষকদের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে ভালো দামে বিক্রি করার সুযোগ কম, কারণ তাদের বেশির ভাগেরই ধারের টাকা পরিশোধ ও সুদ বৃদ্ধির চাপ থাকে বলেও তিনি জানান।