শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায়ও প্রতিশ্রম্নত বিনিয়োগ শঙ্কাহীন

রেজা মাহমুদ
  ২৩ মে ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ২৩ মে ২০২২, ১০:৩৩

চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টালমাটাম অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারায়নি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডার) তথ্যমতে, গত বছরের প্রতিশ্রম্নত প্রায় শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে স্থান সংকট, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার পর্যাপ্ত তৎপরতার অভাব ও স্থান সংকটে অনেক ক্ষেত্রেই নতুন বিনিয়োগ গ্রহণ করা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন বিডার কর্মকর্তারা। করোনার কারণে বিগত বছরগুলোয় দেশে কাঙ্ক্ষিত বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এ লক্ষ্যে সর্বশেষ গত বছর নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া ইউরোপ ও আমেরিকার বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে দেশে কার্যক্রম শুরু করেছেন। বিডার তথ্যমতে, সিলেট ও চট্টগ্রামে এনার্জি খাতে সৌদি আরব প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী বিনিয়োগ শুরু করেছে। একক ও যৌথভাবে দেশটি বাংলাদেশে বৈদু্যতিক ট্রান্সমিটার উৎপাদন করবে। এ ছাড়া গাজীপুরে মার্কিন আইটি প্রতিষ্ঠান 'আইটি হাব' ইতোমধ্যে জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে। এ বছরের শেষদিকে তাদেরও উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া তুরস্ক ও চীনের জ্বালানি ও বিদু্যৎ খাতে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পাশাপাশি জাপান, কুয়েত ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে চলমান রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ দেশে বিদেশি বিনিয়োগকে সরাসরি প্রভাবিত না করলেও এর পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন বিডা'র নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। যায়যায়দিনকে তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগে এই যুদ্ধের সরাসারি কোনো প্রভাব পড়ছে না। কারণ রাশিয়াসহ ইউরোপ আমেরিকার প্রতিশ্রম্নত বিনিয়োগ প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান আছে। তবে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ খাতভিত্তিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ গ্রহণে তৎপরতার ঘাটতির কারণে তা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও স্থান সংকটে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিসহ ট্রান্সপোর্ট খরচ বৃদ্ধিতে প্রত্যাশানুযায়ী উৎপাদনে যাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। সংস্থাটির তথ্যমতে, সৌদি আরব দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস পস্নান্টসহ সার ও চিনি কারখানায় বিশাল বিনিয়োগের প্রস্তাব দিলেও বিভিন্ন জটিলতায় তা আটকে আছে। এ ছাড়া আরও অনেক দেশ বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে তা স্থগিত হয়ে আছে। এ বিষয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ২ বছরে দৃশ্যমান হলেও শতভাগ উৎপাদনে যাওয়ার মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। ইকোনমিক জোন ছাড়া শিল্পকারখানা স্থাপন করা যাবে না। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণেও বিনিয়োগে আগ্রহী অনেক প্রতিষ্ঠানকেই চাহিদা অনুযায়ী জামি বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। মূলত খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রাধান্য ও কৃষিজমি রক্ষায় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সৌদির গ্যাস, সার ও চিনি কারখানা স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, সৌদির বিশাল বিনিয়োগের প্রস্তাব থাকলেও গ্যাস পস্নান্ট স্থাপনে জটিলতা রয়েছে। এতে প্রস্তাবিত অন্য প্রকল্পগুলো নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভারত থেকে সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানি করে স্থানীয় বিভিন্ন শিল্প ও নিজস্ব কারখানায় ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। যদি গ্যাস আমদানি করতে হয় তবে তা বাংলাদেশের মাধ্যমে করতে হবে এমন পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে আগের থেকে দেশের বন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরসহ মোংলা বন্দর সচলে বিনিয়োগকারীরা আরও লাভবান হবে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রায় ৪০টির বেশি প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করছে। তবে বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি বিনিয়োগ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মতৎপরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে