শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু

রপ্তানি আয়ের প্রত্যাশা ৮০ বিলিয়ন ডলার

রেজা মাহমুদ
  ২৪ জুন ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ জুন ২০২২, ০৯:৪৫

রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণসহ নতুন বাজার খোঁজার মধ্যদিয়ে আগামী ২ বছরের মধ্যে দেশের রপ্তানি খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলে মনে করছে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো (ইপিবি)। সংস্থাটির মতে বেশকিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলে ২০২৪ সালের মধ্যে রপ্তানি আয় ৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নতি করা সম্ভব। ইপিবির কর্মকর্তারা যায়যায়দিনকে বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন টার্মিনালে কৃষিপণ্যের জন্য যদি কোল্ড চেইন ও ওয়্যারহাউস স্থাপন করা যায়, তবে রপ্তানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। এছাড়াও দেশের বন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পদ্মা সেতু চালুসহ এবং চামড়া শিল্পের প্রদত্ত প্রণোদনা সুবিধা কার্যকর করা গেলে সহজেই এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে। তাই রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এমন সব সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত 'রপ্তানি-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি'র আসন্ন বৈঠকে এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছে ইপিবি। আর যদি এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলেও মনে করছে সংস্থাটি। এদিকে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ৫৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে ইপিবি। যা গত অর্থবছরের মোট রপ্তানির তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, পণ্যের মানোন্নয়ন, বাজারজাতকরণের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে সংস্থাটি। বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের গন্তব্য মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সংস্থাটি বলেছে, পরিবেশবান্ধব রপ্তানি খাত গড়ে তুলতে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প স্থাপনে নিরুৎসাহিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনকারী রপ্তানিকারককে প্রণোদনা বা নীতিগত সহায়তা দিতে হবে। সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান যায়যায়দিনকে বলেন, পরিবেশগত বিভিন্ন ধরনের কমপস্নায়েন্স ইসু্য আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াতে পারে। ভবিষ্যৎ বাণিজ্য শুধুমাত্র শুল্ক সুবিধা পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে জলবায়ু পরিবর্তনকে সামনে রেখে আবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পণ্য উৎপাদন ও বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে হবে। এছাড়াও আগামী অর্থবছরগুলোতে পদ্মা সেতু রপ্তানি পণ্যে গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিসহ অনেক উৎপাদনমুখী খাত মূল রপ্তানি বাণিজ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। ফলে এখাতে পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়বে। উদ্যোক্তারা যোগাযোগব্যবস্থার কারণে অতীতে স্থানীয় বাজার নির্ভর থাকলে এখন তারাও রপ্তানি চিন্তা করবে। এদিকে, ২০২৪ সালের মধ্যে যে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৮০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার আয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অবশ্যই নতুন বাজার সৃষ্টি, পণ্যের বৈচিত্র্য আনা ও পরিবেশগত কমপস্নায়েন্স অর্জন করতে হবে। এছাড়াও ব্যবসাবান্ধব নীতি অবলম্বন না করলে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে। অন্যদিকে, কৃষিপণ্য রপ্তানিতে উচ্চ হারে প্রণোদনা থাকলেও এ সুবিধা গ্রহণকারীর সংখ্যা খুবই কম। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিবহণ ও মজুতের জন্য হিমাগার না থাকাকে কৃষিপণ্য রপ্তানির মূল সমস্যা বলে মনে করে ইপিবি। সংস্থাটির মতে, বিমানবন্দরে কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় অনেক কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য বাইরে খোলা জায়গায় অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এতে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয় এবং রপ্তানিকারকরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাই কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে দেশকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে মাঠপর্যায়ে প্যাকিং সুবিধা ও কোল্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করার সুপারিশ করে ইপিবি বলেছে, বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানির জন্য কোল্ড চেইন নিশ্চিত করতে ওয়্যারহাউজ স্থাপনের প্রভিশন রাখা প্রয়োজন। এছাড়া কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বাড়াতে প্রসেসিং জোন তৈরিসহ পরীক্ষা সুবিধা বাড়ানো এবং পরীক্ষার সময় ও ব্যয় কমানোর সুপারিশ করেছে ইপিবি। এছাড়াও রপ্তানি আয় বাড়াতে সেবাখাতের উন্নয়নে জোর দেওয়ার সুপারিশ করে ইপিবি বলেছে, বিশ্বে সেবা বাণিজ্যের পরিমাণ ৯ দশমিক ৬০ ট্রিলিয়ন ডলার হলেও এখাত থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সেবা খাতের গতিধারায় প্রবেশের জন্য এই খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিগত সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে ইপিবি। সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কমন এফ্লুয়েন্ট পস্নান্ট (সিইটিপি) কার্যকর না হওয়ায় দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানিপণ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমছে বলে মনে করছে ইপিবি। সংস্থাটি বলেছে, বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করছে, তারা বন্ডের আওতায় বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করে উৎপাদন টিকিয়ে রেখেছে। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশীয় চামড়ার চাহিদা না থাকায় সাভারে স্থাপিত সিইটিপি পস্ন্যান্ট কার্যকর করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো চেষ্টা নেই। ফলে সামগ্রিকভাবে খাতটি অগ্রসর হচ্ছে না। যদি এটা কার্যকর করা যায় তাহলে এখাতেও ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। অন্যদিকে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর শ্রম আইন, পরিবেশগত ইসু্য, সুশাসনসহ বিভিন্ন শর্ত পূরণের পাশাপাশি ডবিস্নউটিও ইসু্যতে নীতিগত বিষয়াবলি প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হবে। তাই রপ্তানিপণ্য উৎপাদনে কঠোর আইন মানার বিষটি সামনে চলে আসবে। তাই সরকারের নীতিমালা প্রণয়নে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা অর্জনের বিষয়াবলি প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন এবং অপ্রচলিত খাতের রপ্তানি উন্নয়নে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টিও বিবেচনা করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছে ইপিবি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে