যে কারণে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ হয়

প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০২৩, ১০:১৩

যাযাদি ডেস্ক
ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতে ২০০৮ সালের পর এটিকেই সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। সোমবার থেকে আবার খুলবে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের সব শাখা। গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করবে এফডিআইসি। এই ঘটনা কেন ঘটলো, তা খুঁজতে গিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান দৃষ্টি দিয়েছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলার নীতি এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি না নিতে চাওয়ার প্রবণতার দিকে।

বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে দ্য গার্ডিয়ান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতায়ই প্রথমে ধীরে ধীরে, তারপর হুট করে বন্ধ হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম শীর্ষ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক। মূলত ঋণ খেলাপীর কারণে ব্যাংকটিতে ধস নামে।

পুঁজি সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)। শুক্রবার (১০ মার্চ) বন্ধ করে দেয়া এই আর্থিক এ প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় আমানতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইউএস ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি)। সেই সাথে, প্রতিষ্ঠানটির সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি:

মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গত বছর থেকে সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরও ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার ছিল ইতিহাসে সবচেয়ে কম। সুদের হার বেড়ে গেলে সাধারণত বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি ঝুঁকি নিতে চান না। প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন স্টার্টআপই মূলত সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের অধিকাংশ গ্রাহক। আর এই স্টার্টআপগুলোর বেশিরভাগই আছে প্রাথমিক পর্যায়ে। তাই সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

এসভিবি’র গ্রাহকদের নগদ অর্থের সংকট:

সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেনি অনেক স্টার্টআপ। ব্যক্তিগত খাত থেকে অর্থ প্রাপ্তিও ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য। নগদ অর্থের চাহিদা পূরণের জন্য এসভিবির এরকম অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছে নিয়েছে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক এই সপ্তাহজুড়েই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে গেছে। এসভিবি তার গ্রাহকদের নগদ অর্থ উত্তোলনের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন পথ খুঁজেছে।

লোকসানে বন্ড পোর্টফোলিও বিক্রি:

বড় অংকের দায় মেটাতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক গত বুধবার ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা, ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার মূল্যের বন্ড বিক্রি করে। আর সে সব বন্ডের বেশির ভাগই ছিল ইউএস ট্রেজারি বন্ড। এই বন্ডে এসভিবি সুদ পাচ্ছিল গড়ে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ; যা ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের বর্তমান সুদহার ৩ দশমিক ৯ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। এ কারণে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসানে পড়তে হয় এসভিবিকে। আর, এই লোকসান পূরণ করতেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির পুঁজি বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে।

এসভিবি কর্তৃক শেয়ার বিক্রির ঘোষণা:

গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) এসভিবি ঘোষণা করেছে যে, তহবিলের ঘাটতি পূরণ করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ বিক্রি করবে। এই ঘোষণার পর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৬০ শতাংশ কমে যায়। বিনিয়োগকারীরা এতে আরও হতাশ হয়ে পড়ে এই ভেবে যে, আমানতকারীদের অর্থ উত্তোলনের কারণে এসভিবিকে হয়তো আরও বেশি পরিমাণে পুঁজি সংগ্রহ করতে হবে।

শেয়ার বিক্রিতে ধস:

রয়টার্স জানিয়েছে, পিটার থিল’স ফাউন্ডার্স ফান্ডের মতো কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের পরামর্শে এসভিবির বেশ কয়েকজন গ্রাহক এই ব্যাংক হতে তাদের টাকা তুলে নেয়। জেনারেল আটলান্টিকের মতো বিনিয়োগকারীরা এই ঘটনায় ভয় পেয়ে যায় যে, এসভিবি শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে, বৃহস্পতিবার চেষ্টা করেও পুঁজি সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয় এসভিবি।

এফডিআইসির অধীনে এসভিবি:

বিকল্প পথে তহবিল সংগ্রহের জন্য গত শুক্রবার চেষ্টা করে এসভিবি। এমনকি, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির চেষ্টাও করা হয়। সেই দিনই ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি) ঘোষণা করে যে, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ব্যাংকের যাবতীয় আমানতের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন। এফডিআইসি আরও জানায়, তারা এসভিবির সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করবে এবং বীমাবিহীন আমানতকারীদেরকে ভবিষ্যতের লভ্যাংশ দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

যাযাদি/ এস