শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টোল আদায় কমেছে চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডে

নুরউদ্দীন খান সাগর, চট্টগ্রাম
  ২৭ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৯
আপডেট  : ২৭ মার্চ ২০২৩, ১২:৩১

চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট এক্সেস সড়কে কমেছে টোল আদায়ের পরিমান। কয়েকটি কারণে টোলের পরিমান কমেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা হয়। এতে গাড়ি চলাচল কমে যায় পোর্ট এক্সেস সড়কে । তাছাড়া আউটার রিং রোড ও পোর্ট কানেক্টিং (পিসি) রোডে যানবাহন চলাচল করায় এ সড়কে টোল আদায় কমে যায়। এছাড়াও বিগত কয়েক বছর দেশের আমদানি ও রপ্তানি কমে যাওয়াকেও কারণ বলে দাবি করেন সওজ কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজীকরণে সড়ক ও জনপদ বিভাগ ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডটি চালু করে। যেহেতু এটি বন্দরকেন্দ্রিক গাড়ি চলাচলের একমাত্র সড়ক, তাই টোলের আওতায় আনে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। কিন্তু পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনির্মিত চার লেনের পোর্ট কানেক্টিং রোড (পিসি রোড) চালু হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও কন্টেইনার বাহী লরীর চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডের টোল আদায়ে প্রভাব ফেলেছে।

পোর্ট এক্সেস সড়কে টোল আদায়ের শুরু থেকে প্রায় দেড় দশক শেষ হলেও বিগত বছর গুলোর কোন মাসে ৫০ থেকে ষাট লাখের বেশি টোল আদায় হয়নি। সম্প্রতি এই অংক আরো কমে এসেছে।

সওজের তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে পোর্ট এক্সেস রোডে টোল আদায় হয়েছে ৩৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৩১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, মার্চে ৩৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা, এপ্রিলে ৩৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, মে’তে ৩০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, জুনে ২৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, জুলাইয়ে ২৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা, আগস্টে ৩২ লাখ ১১ হাজার টাকা, সেপ্টেম্বরে ২৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা, অক্টোবরে ২৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, নভেম্বরে ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ডিসেম্বরে ২৩ লাখ ২২ হাজার টাকা এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আদায় হয়েছে ২৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের মে মাসের পর থেকে (আগস্ট ২২ ব্যতিত) টোল আদায় ৩০ লাখের নিচে নেমে এসেছে। এরপর অক্টোবর থেকে ২৫ লাখের নিচে নেমে আসে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস সড়কে টোল আদায় উল্ল্যেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে জানায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এরমধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোড সংলগ্ন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত চার লেনের আউটার রিং রোড এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ রোডের টোল আদায়ে সরাসরি প্রভাব পড়েছে। সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড ও সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার যানজটে দুর্ভোগের কারণে আউটার রিং রোডের ব্যবহার বেড়েছে। এছাড়াও আউটার রিং রোডের আশপাশে কয়েকটি ট্রাক- কাভার্ডভ্যান ও লরীর টার্মিনাল চালুর হওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যবহারযোগ্য গাড়ির চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডে চলাচলরত গাড়ির সংখ্যা আনুপাতিক হারে কমে গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বারেক বিল্ডিং ১ নং জেটি, গোসাইলডাঙ্গা ২নং জেটি, ফকির হাটের ৩নং জেটি, কাস্টমস হাউজের ৪নং জেটিতে পণ্য নিয়ে চলাচলকারী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও কন্টেইনারবাহী লরীগুলো খুব সহজেই পোর্ট কানেক্টিং রোড হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারছে। এছাড়াও স¤প্রতি ডলার সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কমে যাওয়াতে বাণিজ্যিক গাড়ির চলাচলও কমে গেছে। এটিও পোর্ট এক্সেস রোডে টোল আদায় কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

তাছাড়া ইজারাদার নিয়োগ জটিলতার কারণে বর্তমানে চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডে টোল আদায় কার্যক্রম চালাচ্ছেন সড়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

সওজ কর্মকর্তাদের মতে, ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঠিকাদারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৯০ দিন সময় বাড়ায় মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে আবেদন করলেও আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। বর্তমানে সড়ক ও জনপদ বিভাগের জনবল সংকটের কারণে অস্থায়ী জনবল দিয়ে টোল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সওজ বিভাগ। বর্তমানে সড়কটিতে টোল আদায়ে ইজারাদার নিয়োগে টেন্ডার আহবান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ।

চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, টোল আদায় কমেছে, সেটি আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। বিকল্প আরও দুইটি সড়ক হওয়াতে পণ্যবাহী বড় গাড়িগুলো চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে টোল আদায় কমে যায়।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে