ইউটিউবে দেখে উদ্বুদ্ধ, সাড়া ফেলেছে মিষ্টি আঙুর

প্রকাশ | ১১ মে ২০২৩, ০৯:৪৫

মিলন রহমান, যশোর

যশোরের লেবুতলায় ফলেছে মিষ্টি আঙুর। বিশাল ক্ষেতে এই মিষ্টি আঙুর চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন কৃষক মুনসুর আলী। তার এক বিঘার ক্ষেতে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। তা দেখতে যেমন মানুষ ভিড় করছেন; তেমনি আঙুর চাষের পরামর্শ ও চারা সংগ্রহও করছেন বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। এ অঞ্চলের মাটিতে আঙুর চাষ করতে দেখে একসময় যারা মুনসুরকে নিয়ে উপহাস করেছিলেন; এখন তারাই হতবাক হয়ে তার গুণগান গাইছেন।

যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের কৃষক মুনসুর আলী। তিনি এর আগে দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে কলম বা চারা কিনে লাগালেও ফল পাননি। কখনো কিছু ফল পেলেও তা ছিল খুবই টক এবং পরিমাণেও কম ছিল। সর্বশেষ ২০ মাস আগে তিনি ৩৩ শতক জমিতে ভারতীয় চয়ন জাতের আঙুরের চারা রোপণ করেন। ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১২০টি চারা এনে জমিতে রোপণ করেন তিনি। চারা রোপণের ৭ মাস পর গাছে ফল আসে। এই ইন্ডিয়ান আঙুর মিষ্টি ছিল বলে তিনি জানান। 

কৃষক মুনসুর আলী জানান, ভারত থেকে প্রতিবেশীর মাধ্যমে চারা এনে চাষ শুরু করেন। প্রথমবার ৭ মাসের মাথায় গাছগুলোয় আঙুর ধরেছিল এবং ৫-৭ মণ ফল পান। তবে প্রথম ফল পাওয়ায় একটিও বিক্রি না করে এলাকার মানুষকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বারের মতো এবার গাছে প্রচুর পরিমাণ ফল হয়েছে। ৩৩ শতাংশ জমিতে ২শ’ মণের বেশি আঙুর হবে বলে আশা করছেন তিনি। এ গাছে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে।
তিনি জানান, আমি ইউটিউব দেখে চিন্তা করি আমাদের দেশের মাটি সোনার মতো। এখানে যা চাষ করা হয় তাই হয়। অতএব, আঙুরও হবে। তবে ইউটিউব দেখে চাষ করে আমার বেশ খরচ হয়েছে। এ বছর আরও দেড় বিঘা নতুন করে চাষ শুরু করছি।

তিনি জানান, আঙুর গাছ ৮ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়েছে। এ গাছ লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করে প্রতিটি গর্তে পাঁচ কেজি বিভিন্ন উপাদান দেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে ইটের গুঁড়া, মোটা বালু এবং জৈব সার। এগুলো ৩ ফুট গর্ত করে মাটির সঙ্গে মিশ্রণ করে গর্তে দেওয়া হয়। প্রতিটা গাছের গোঁড়া মাটি দিয়ে উঁচু করা যাতে গোঁড়ায় পানি না জমে। আঙুর গাছ যাতে দ্রুত লম্বা হতে পারে এর জন্য উঁচু করে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে মাচা তৈরি করেছেন। ফলে ঝড়-বৃষ্টি এলে গাছ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কম থাকে। 

কৃষক মুনসুর আঙুর চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদনও করছেন। আঙুরের বাম্পার ফলন দেখে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে তার কাছে থেকে চারা সংগ্রহ করতে আসছেন অনেকে। আঙুর কলম চারা ২০০-৩০০ টাকা করে কিনে নিচ্ছেন তারা। 

আঙুর চাষি মুনসুর আলী নিজের বাগানকে এ অঞ্চলের একমাত্র বাগান দাবি করে জানান, আশা করি এ বছর ২শ’ মণ ফল পাব। সাধারণত ৮০-৮৫ দিনে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। এখন যে ফল দেখছেন তা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে খাওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হলো এ চাষ যখন শুরু করি তখন আমার আশপাশের মানুষ বিভিন্নভাবে উপহাস করতে থাকে। এমনকি অনেকে পাগলও বলে। দোকানে তো বসতেই পারতাম না। কিন্তু এখন আমার আনন্দ ধরে না। প্রতিদিন আঙুর দেখার জন্য অনেক মানুষের সাক্ষাৎ মিলছে। আশা করি এ বছর অনেক লাভবান হতে পারব। এর আগে কোনো মানুষের কাছ থেকে কোনোরূপ আশা পাইনি। কিন্তু এখন সব সময় মানুষ পাশে থাকছে। কৃষি অফিসাররাও আসছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে এখন আর তেমন বেশি খরচ নেই। 

লেবুতলা গ্রামের কৃষক আতর আলী জানান, যে বছরে মুনসুর আঙুর লাগায় তখন মনে হচ্ছিল হবে না। আমরা বলেছি মুনসুর এ কি করছে, কিন্তু এ বছর গাছে লাখ লাখ টাকার ফল হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষও দেখতে আসছে। আমরাও চাষ করব। আমরা উচ্ছের চাষ করি। কিন্তু সবজি তো ৩-৪ মাসে শেষ হয়ে যায়। আর আঙুর বহু বছরের আবাদ। আমাদের গ্রামে অনেকেই এখন আঙুর লাগাবে। 

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে আঙুর চারা সংগ্রহ করতে এসেছিলেন সুমন মিয়া। তিনি জানান, মিষ্টি আঙুর যে আমাদের দেশে হবে তা আমার জানা ছিল না। আমি ইউটিউব থেকে মুনসুর ভাইয়ের আঙুর দেখে এসেছি। আঙুর বাগান দেখে খুব ভালো লাগছে। আমি প্রথমবারের মতো ১০ কাঠা জমিতে এ ফল চাষ করব। এখানে পরামর্শ এবং চারা কিনতে এসেছি।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আবু তালহা বলেন, এর আগে কেউ যশোরে এমন বাগান করতে পারেননি। লেবুতলা গ্রামের চাষি মুনসুর আলী ৩৩ শতক জমিতে আঙুরের চাষ করেছেন। ভালো ফলনও হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত মিষ্টি আঙুরের চাষ হয় না। কিন্তু মুনসুর আলী ভারত থেকে চারা সংগ্রহ করে এ চাষ করেছেন। সফলও হয়েছেন। এভাবে কৃষকরা যদি আঙুর চাষে ঝুঁকে পড়েন তাহলে এই বিদেশি ফল আমদানি কমে যাবে। কৃষকরাও ভালো লাভবান হবেন। বাড়িতে যদি প্রত্যেকে ২টি করে গাছ লাগান তাহলে বাড়িতে আঙুরের চাহিদাও পূরণ হবে।

যাযাদি/ এস