সার্ক চেম্বার সভাপতির দায়িত্বে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৩, ১৪:৫৩

যাযাদি ডেস্ক

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন সার্ক চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসসিসিআই) এর ২০২৩-২৪ মেয়াদে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর বর্তমান সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। 

বৃহস্পতিবার (২৫ মে, ২০২৩) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে এসসিসিআই এর সভাপতির দায়িত্ব নেন তিনি।

সার্ক চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসসিসিআই) এর নেতৃত্ব বুঝে নেয়ার পর এফবিসিসিআই এর বর্তমান সভাপতি জনাব জসিম উদ্দিন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্র্যময় সম্পদ এবং দক্ষ জনবলের অভূতপূর্ব সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলটি বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল রপ্তানিকারক অঞ্চল। তবে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। 

দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে আন্তঃবাণিজ্যের হার এই অঞ্চলের মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫-৭ ভগের মত। উপরন্তু, প্রতি বছর এটি হার আরও কমছে। অন্যদিকে, অন্যান্য আঞ্চলিক জোটগুলোর মধ্যে বাণিজ্য দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মোঃ জসিম উদ্দিন।

তিনি বলেন,অন্যান্য আঞ্চলিক চুক্তির সাফল্য থেকে শিক্ষা নিয়ে সার্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্ভাবনী এবং টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এই অঞ্চলের জনগণের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব।”

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, উৎপাদনমুখী শিল্প, জ্বালানি, পর্যটন এবং কৃষির মত সম্ভাবনাময় খাতগুলোয় অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে মন্তুব্য করেন SCCI সভাপতি যোগ করেছেন।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আবদুল মোমেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর একটি। অনেক সম্ভাবনা সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যবশত আমরা বিদ্যমান সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে পারবিদ্যমান সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে পারছি না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বড় ভূমিকা রাখেতে পারে। এক্ষেত্রে ট্যারিফ এবং নন-ট্যারিফ বাধা কমিয়ে আনতে হবে। আমি আশা করি সার্ক চেম্বার এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা জনাব সালমান এফ রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা কিছু কৃত্রিম রাজনৈতিক বাধার কারণে অগ্রসর হতে পারছি না। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলকে সমৃদ্ধশালী করতে আমাদের এই সমস্যার সমাধানে পৌছতে হবে।

এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সার্ক চেম্বার এই অঞ্চলের সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। 

এদিকে, দায়িত্ব গ্রহনের পর নতুন সভাপতির নেতৃত্বে সার্ক চেম্বারের এক্সিকিউটিভ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে অংশ নিয়ে মোঃ জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে বেগবান করতে সমন্বিতভাবে কাজ করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন সার্কভুক্ত দেশসমুহের ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্যবসায় হাতেখড়ি নিয়ে খ্যাতনামা শিল্পদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন মোঃ জসিম উদ্দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্টিজ লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে শিল্পাঙ্গনে যাত্রা শুরু করে ব্যবসা ছড়িয়েছেন গণমাধ্যম, ব্যাংক, বীমা, হোটেল, আবাসন, সিমেন্ট, ইলেকট্র্রনিকস পণ্য, কেমিক্যাল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ট্রেডিং, তৈরি পোশাক ও পশু খাদ্য প্রক্রিয়াকরণসহ বিভিন্ন খাতে। দেশের এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা বর্তমানে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে তিনি বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাট্রিজ এবং বেঙ্গল মিডিয়া করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালেন করছেন।

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক পলিসি অ্যাডভোকেসিতে তাঁর অবদান অনেক। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে শুরু থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। 

এফবিসিসিআই এর সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে তিনি বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের বিজনেস সেক্টরের সবচেয়ে বড় আয়োজন বাংলাদেশ বিজনেস সামিট -২০২৩ সফলভাবে সম্পন্ন করে দেশ বিদেশের ব্যবসায়ী মহলে দারুণ প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন তিনি।

দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ একাধিকবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্ব- সিআইপি সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। জাতীয় রপ্তানি ট্রফিও জিতেছেন একাধিকবার। 

এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন এর আগে ২০১০-২০১২ মেয়াদে এফবিসিসিআইর প্রথম সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তার আগে ২০০৮-২০১০ মেয়াদে এটির পরিচালক ছিলেন তিনি।  

অনুষ্ঠানে ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফপিসিসিআই) এর সভাপতি ইরফান ইকবাল শেখ, সার্ক সিসিআই (শ্রীলঙ্কা) এর প্রাক্তন সভাপতি মিকি হাশিম, রুয়ান এদিরিঙ্গে, সার্ক সিসিআই (পাকিস্তান) এর সহ-সভাপতি আঞ্জুম নিসার,মালদ্বীপের প্রাক্তন মন্ত্রী মরিয়ম শাকিলা, সার্ক সিসিআই (শ্রীলঙ্কা) এর প্রাক্তন সভাপতি রুয়ান এদিরিঙ্গে, সার্ক সিসিআই (নেপাল) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং নেপাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফএনসিসিআই) সাবেক সভাপতি চন্ডি রাজ ঢাকাল, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় বসু, আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য জানাকা সিদ্দিকী, এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি, পরিচালকবৃন্দসহ বাংলাদেশ ও সার্কভুক্ত দেশসমুহের ব্যবসায়ী নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

যাযাদি/ এস