ডিম সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি
প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৩ | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৪
সম্প্রতি বাজারে ডিমের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে নামে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)। প্রায় সপ্তাহব্যাপী অনুসন্ধান শেষে সংস্থাটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে দাম বৃদ্ধির জন্য বাজার সিন্ডিকেটকে দায়ী করার পাশাপাশি এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি শীর্ষ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও তাদের পরিচালিত সমিতিগুলোর সম্পৃক্ততার কথাও উঠে এসেছে। এরই ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য সওদাগর মোস্তাফিজুর রহমান যায়যায়দিনকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কমিশনের সূত্র মতে, সবশেষ ডিমের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে ৬টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও তাদের ৪টি অ্যাসোসিয়েশনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণে প্রমাণও পেয়েছে কমিশন।
কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গত মাসের শুরুতে হঠাৎ ডিমের দাম বেড়ে গেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রতিযোগিতা কমিশনকে পাঠানোর পর অনুসন্ধান শুরু হয়। চলতি সপ্তাহে শেষ হওয়া অনুসন্ধানে মোট ১০ কোম্পানি ও তাদের সমিতির যোগসাজশের মাধ্যমে বাজারে ডিমের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।
সওদাগর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এর আগেও অনেকের বিরুদ্ধে কমিশন মামলা করেছে। তবে এবারের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর থেকে শুরু করে ট্যারিফ কমিশন ও প্রতিযোগিতা কমিশন সবাইকে বাজার সিন্ডিকেটের উৎস অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই ভিত্তিতে আগস্টের শেষে বিসিসি ২টি টিম বাজার অনুসন্ধানে নামে। ইতিমধ্যেই একটি প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
বিসিসি সূত্র বলছে, কাজী ফার্মস লিমিটেড, প্যারাগন পোল্ট্রি লিমিটেড, ডায়মন্ড এগ লিমিটেড, পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড, নাবা ফার্ম লিমিটেড, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ড্রাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি), বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিআইএ), বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ, পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ (পিপিবি) এবং ইউনাইটেড এগ সেল পয়েন্টের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাজার কারসাজির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ১৫(১), ১৫(২)(ক)(অ), ১৫(২)(খ) ও ১৫(২)(গ) ধারা অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করে মামলা করা হচ্ছে।
বিসিসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ সপ্তাহেই মামলা দায়ের করা হতে পারে। মূলত বিসিসি মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে। জানা গেছে, এর আগেও পোল্ট্রি পণ্যের বাজার কারসাজির দায়ে বেশ কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যেগুলোর রায়ও এ সপ্তাহে হতে পারে।
প্রান্তিক খামারিদের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার এই অনুসন্ধান কার্যক্রম আরও জোরদার ও নিয়মিত পরিচালনা করার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘প্রতিযোগিতা কমিশন যদি নিয়মিতভাবে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দিতে পারে তাহলে পোল্ট্রি পণ্যের বাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। এছাড়াও আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এসব শীর্ষ কর্পোরেট কোম্পানি ও তাদের সমিতিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আসছি।’
বিসিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, বাজার পর্যবেক্ষণ, উৎপাদন ব্যয়, খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতামত ও ভোক্তা অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এই মামলা করা হবে।
যাযাদি/ এস