চড়া আলুর বাজার, দেড়শ ছুঁই ছুঁই দেশি পেঁয়াজ

প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪৬

যাযাদি ডেস্ক

মাত্র ১ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে দেশি পেঁয়াজ ও আলুর দাম। শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রায় দেড়শ’ ছুঁয়েছে এই পণ্যের দাম। অন্যদিকে ভারত থেকে আলু আমদানি করা হলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। এদিনও প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে নির্ধারিত দামের থেকে দ্বিগুণের বেশি দামে। বাজারে কিছু সবজির দাম কমলেও তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। 

গত অক্টোবর মাস জুড়েই অস্থিরতা বিরাজ করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। বিশেষ করে ডিম আলু পেঁয়াজ ও সবজির লাগামহীন দাম ভুগিয়েছে ক্রেতাদের। এছাড়া কার্যকর করা যায়নি ডিম আলু ও পেঁয়াজের সরকার নির্ধারিত দাম। বাজারের এসব পণ্যের উচ্চ মূল্য অব্যাহত আছে এ সপ্তাহেও।

শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন যে দামে পাইকারিতে বিক্রি হয়, সে হিসাবেই খুচরায় দাম নির্ধারিত হয়। যদিও আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে গত রোববার আলু আমদানির ঘোষণা দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, আলু আমদানির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পাইকারিতে প্রতি কেজি আলুতে সোমবার ২ টাকা, মঙ্গলবার ৫ টাকা এবং বুধবার ১০ টাকা বেড়ে যায়। ফলে খুচরায় দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি কেজি ৭০ টাকায়। 

এদিকে প্রায় ১৫টি প্রতিষ্ঠান আলু আমদানির অনুমতি  পেয়েছে। যার মধ্যে গত তিন দিনে এক লাখ সাত হাজার টন আলু আমদানি অনুমতির বিপরীতে দেশে এসেছে মাত্র ৭৭ টন আলু। যেখানে প্রতি কেজি আলুর আমদানি মূল্য ২৫ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে পরিমাণ আলু আমদানি করা হচ্ছে তা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। প্রয়োজন দৈনিক চাহিদার অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আলুর আমদানি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি অনুবিভাগ সূত্র জানিয়েছে এ সপ্তাহের মধ্যে আলুর সরবরাহ বাড়বে। প্রয়োজনে আরও আমদানি করা হবে। 

অন্যদিকে শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকার উপরে এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে। যা পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ১৫০ ও ১২৫ টাকা দরে। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি ও আমদানি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪০ টাকা এবং ২ সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৬০ টাকারও বেশি। 

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডলার সংকট ও পেঁয়াজের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিতে বাজারে সরবরাহ ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দাম বাড়তির দিকে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমান ডলার মূল্যে পেঁয়াজ আমদানি ব্যয় ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে এলসি খুলতে না পারায় সবাই পেঁয়াজ আমদানি করতে পারছে না। ফলে বাজারে দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। 

এদিকে রাজধানীর বাজারে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। তবে এখনো স্বাভাবিক দামের থেকে বেশি। শুক্রবারও রাজধানীর বাজারে প্রায় ৪০ টাকা কমে গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ১শ টাকা দরে। ৩০ টাকা কমে সরু লম্বা বেগুন বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা দরে। প্রায় ১শ টাকা কমে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা দরে এবং প্রতি কেজি সিম বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে। অন্যদিকে কেজিতে প্রায় ২০ কমে  কচুরলতি, কচুরমুখী, বরবটি, শসা, চিচিঙ্গা, করোল্লা ও ঝিঙ্গার কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা দরে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে, ঢেঁড়স প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা এবং পেঁপে ৪০ টাকা কেজি দরে। 

এদিকে বাজারে কিছুটা বেড়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়ে ১৫৫ টাকা দরে। অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির বাজার। এদিন প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩৪০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯০ টাকা দরে। 

গত সপ্তাহের দাম অব্যাহত আছে মাছের বাজারে। এছাড়াও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। তবে শুক্রবার সব বাজারে ইলিশের সরবরাহ ছিল না। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শনিবার থেকে সব বাজারেই ইলিশ পাওয়া যাবে। অন্যদিকে এদিন মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা, বড় কাতল ৫শ’, বড় পাঙ্গাশ আড়াইশ, চাষের কই (ছোট) ৩৭০, তেলাপিয়া ৩শ ও শিং মাছ ৬শ, শোল মাছ ৮শ’, পাবদা ৬শ’ থেকে ৭শ’। ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৮শ’ থেকে ১ হাজার, মলা মাছ ৬শ’ টাকা, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া মাছ ৪শ টাকা, মাঝারি আকারের বোয়াল ৭শ’ থেকে ৮শ’, গুঁড়ামাছ ৪শ, ছোট চিংড়ি ৫শ’, গলদা ৭শ’ এবং বাগদা ৮শ’ থেকে ৯শ’ ও রূপচাঁদা  ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 

যাযাদি/ এসএম