ডিসেম্বরেও উত্তাপ ভোগ্যপণ্যের বাজারে
প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩২
এবার বছর জুড়েই উত্তাপ ছড়িয়েছে ভোগ্যপণ্যে অস্বাভাবিক দাম। ডিসেম্বরে এসেও যা অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর বাজারে এ মাসেও যথারীতি চড়াই রয়েছে আটা-ময়দা, চিনি, ডাল, আলু ও পেঁয়াজের দাম। এর মধ্যে আমদানি পণ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশীয় পণ্যের বাজার চড়া, ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে।
তবে বছরের শেষ মাসে এসে কিছুটা স্বস্তি ডিম ও সবজির বাজারে। এ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে ডিম এবং ৫০ টাকায় মধ্যে বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ সবজি। তবে বছর জুড়েই এ দুই পণ্যের অস্বাভাবিক দামও ভুগিয়েছে ক্রেতাদের।
গত মাসের শুরুতে বেড়ে যাওয়া আটা-ময়দা, চিনি ও মসুর ডালের দাম এ মাসেও অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে বাড়তি দামেই বিক্রি হয়েছে খোলা ও প্যাকেটজাত আটা-ময়দা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলো নতুন রেটে ২ কেজির আটা ও ময়দার প্যাকেট সরবরাহ করেছে। তবে দাম এক লাফে ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দামে ২ কেজির আটা ১২০ টাকা এবং ময়দা ১৪০ টাকা করা হয়েছে। যা নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১শ ও ১২০ টাকা দরে। ফলে বাজারে খোলা আটা ও ময়দা প্রতি কেজি ৫০ ও ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একই অবস্থা চিনি ও মসুর ডালসহ বেশিরভাগ আমদানি পণ্যের দরেও। এদিন বাজারে প্রতি কেজি চিনি এবং ছোট দানার মসুর ডালের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকার উপরে। অন্যদিকে গত ৪ মাস ধরে উত্তাপ ছড়ানো পেঁয়াজের বাজার এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকার উপরে। এর আগে এত দীর্ঘ সময় পেঁয়াজে এমন দাম দেখা যায়নি।
এদিকে বাজারে নতুন আলু আসতে শুরু করলেও দাম স্বস্তি পাচ্ছে না ক্রেতারা। এখনো বাজারে ৫০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে পুরানো আলু। অন্যদিকে নতুন আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ বছরের শেষ মাসে এসে ডিম ছাড়া অন্য কোনো পণ্যে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি।
অন্যদিকে বছর শুরুতে খাদ্য পণ্যে ৭.৭৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি থাকলেও শেষ হচ্ছে প্রায় ১৪ শতাংশে। বিশেষ করে শেষ চার মাসে গড়ে প্রায় ২ শতাংশ হারে বেড়েছে এর হার। এর ফলে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯.৪০ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, বছরের শুরুতে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে খাদ্য উৎপাদন ও পরিবহণে বাড়তি খরচ খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তা সার্বিক মূল্যস্ফীতির থেকে তা ছিল। তবে জুন-জুলাইয়ে পর রিজার্ভ সংকট ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান হ্রাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি সার্বিক মূল্যস্ফীতিকে ছাড়িয়ে যেতে থাকে। মূলত বাজার সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে এখাতে মূল্যস্ফীতির এমন অস্বাভাবিক প্রবণতা দেখা গেছে। অর্থাৎ অন্য যে কোনো পণ্যের থেকে খাবারে ভোক্তার ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ।
তবে গত দু-সপ্তাহ ধরে বাজারে কমতির দিকে ডিমসহ পোল্ট্রি পণ্যের দাম। এদিন প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১১৫-১২০ টাকা মধ্যে। সে হিসেবে প্রতি পিস ডিমের দাম ১০ টাকার কম। যা সরকার নির্ধারিত দামের থেকেও প্রতি পিসে প্রায় আড়াই টাকা কম। ফলে ডিম আমদানির অনুমতি নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে ডিম আনছেন না। এছাড়াও বাজারে প্রতি সপ্তাহেই কমেছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম। এদিন প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা ও সোনালি ২৯০ টাকা দরে।
অন্যদিকে বাজারে শীতের সবজির ব্যাপক সরবরাহ দেখা গেছে। যদিও হরতাল-অবরোধে সবজি পরিবহণ কমছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত দু-সপ্তাহ ধরে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। ফলে সবজির কম এলেও তা ক্রেতা চাহিদার থেকে বেশি। ফলে দামও কমতির দিকেই রয়েছে। এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি।
অন্যদিকে, প্রায় অপরিবর্তিত দাম রয়েছে মাছের বাজারে। এদিন মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪শ’, বড় কাতল ৪শ’, বড় পাঙ্গাশ ২শ’, চাষের কই (ছোট) ৩২০, তেলাপিয়া আড়াইশ’ ও শিং মাছ ৬শ’, শোল মাছ ৮শ’ টাকা, পাবদা ৫শ’ থেকে ৬শ’, ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৬শ’ থেকে ৭শ’, মলা মাছ ৫শ’, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪শ’, মাঝারি আকারের বোয়াল ৫শ’ থেকে ৬শ’, গুড়ামাছ ৩শ’ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ’ টাকা, গলদা ৭শ’ এবং বাগদা ৮শ’ থেকে ৯শ’ ও রূপচাঁদা ৯শ’ টাকা দরে।
যাযাদি/ এসএম