ভারত চীন রাশিয়া অর্থ ছাড় বেড়েছে

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫০

এম সাইফুল
ফাইল ছবি

ধীরে ধীরে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে ভারত, চীন ও রাশিয়া। যখন পুরনো অংশীদাররা বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ ছাড় করতে ব্যর্থ হয়েছে। ঠিক তখনই ভারত, চীন ও রাশিয়া কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়াই এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বা ১১ হাজার ৭৪৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা ছাড় করেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সবগুলো দাতা সংস্থার ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ চার বিলিয়ন ডলারের সামান্য কিছু বেশি। এর এক চতুর্থাংশ দিয়েছে ভারত, চীন এবং রাশিয়া। যদিও এই তিন দেশ কোনো অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ভারতের ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ ০.১৬ বিলিয়ন, চীনের ০.৩৬ বিলিয়ন এবং রাশিয়ার ০.৫৪ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ২.৪ বিলিয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও দিয়েছে ১.১ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংক ১.৪ বিলিয়ন দেওয়ার ঘোষণা দিলেও ০.৮৯ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। বাংলাদেশের এককভাবে সবচেয়ে বড় দাতা দেশ দুই বিলিয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও দিয়েছে মাত্র ০.৮১ বিলিয়ন ডলার।

বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। 

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দিকে অর্থছাড়ের গতি কম ছিল। যে কারণে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে অর্থ ছাড় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ কমে যায়। 

অবশ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগী সংস্থা এবং দেশের প্রতিশ্রুতির মধ্যে ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার ছাড় হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর যা ছিল ৩৭৮ কোটি ৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার বেশি ছাড় হয়েছে। 

গত নভেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিদেশি ঋণ ও অনুদান মিলে ছাড় হয়েছিল ২১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বরে প্রায় ১৯৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে। 

অর্থছাড় বেশি হওয়ার বিষয়ে ইআরডি সূত্র জানায়, মূলত ডিসেম্বরের প্রথম দিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্ব ব্যাংকসহ বেশ কিছু সংস্থা সরকারের অনুকূলে বাজেট সহায়তার অর্থছাড় করে। এতে অর্থছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নেও কিছুটা উন্নতি হওয়ায় সার্বিকভাবে গত ডিসেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার ছাড়ে উন্নতি হয়েছে। 

এদিকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণদাতাদের কাছ থেকে সরকার যে অর্থছাড় করতে পেরেছে সেটি থেকে ৩৯ শতাংশই আবার পুরনো ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ছয় মাসে পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ১৫৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। সে হিসেবে নিট বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪৯ কোটি ৫৯ লাখ ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থ পরিশোধের পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাওনা পরিশোধ করা হয়েছিল ১০৫ কোটি ডলার। 

এদিকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোর কাছ থেকে নতুন করে ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে এ পরিমাণ অর্থায়নে চুক্তি হয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে। 

ছয় মাসে দাতাদের সঙ্গে সরকার আগের অর্থবছরের ছয় মাসের তুলনায় প্রায় ২৯৭ শতাংশ বেশি নতুন ঋণ চুক্তি করেছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলারের চুক্তি হয়েছিল। 

তবে চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১২ গুণ বেড়ে ৫৮৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরের নভেম্বরে যা ছিল ৪৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিসিসিআই) সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা যায়যায়দিনকে বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। ধীরে ধীরে চীনের গুরুত্ব বাড়ছে। চীনের মুদ্রায় যদি সরাসরি বাণিজ্য করা যেত তাহলে আরও সুবিধা হতো। গত কয়েক বছরে ডলারের বাজার যেভাবে বেড়েছে। সেভাবে চীনা মুদ্রা বাড়েনি। অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। তাই চীনা মুদ্রার সঙ্গে সরাসরি ব্যবসা করতে পারলে বাংলাদেশের জন্যই ভালো।

আল মামুন মৃধা আরও বলেন, চীনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ব¡। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত জিটুজি সম্পর্ক বাড়ানো। তাহলে চীন থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ আনা সম্ভব। চীনা বিনিয়োগকারীদের দেশে আনার জন্য খুব শিগগিরই একটি ইনভেস্টমেন্ট সামিট করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিসিসিআইর সহসভাপতি মোহাম্মদ ইসাকুল হোসেন সুইট যায়যায়দিনকে বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে হবে। তাহলে দেশের জনগণ ও ব্যবসায়ী সবাই উপকৃত হবে।

এ বিষয়ে ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (আইবিসিসিআই) সহসভাপতি সঞ্জয় বসু যায়যায়দিনকে বলেন, ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কারণে ভারতের অনেক বিনিয়োগ আসছে। ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরও বাড়বে।

যাযাদি/ এস