নারীর কারিগরি, প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর এফবিসিসিআইর

প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০২৪, ১৩:৪৩

বিশেষ প্রতিনিধি

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস ও উদ্যোক্তা তৈরিতে নারীদের কারিগরি, প্রযুক্তিগত এবং প্রশাসনিক দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে দীর্ঘমেয়াদে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে রাজধানীর পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তারা। 

শনিবার (৯ মার্চ) সকালে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ’সাপোর্টিভ ইকোসিস্টেম ফর উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ এন্ড প্রফেশনালস’ শীর্ষক এক সেমিনারে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এই কথা বলেন। 

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে এই সেমিনারের আয়োজন করে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি) এমপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নারীদের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতানুগতিক কাঠামো থেকে বেড়িয়ে এসে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। 

তিনি আরও বলেন, নারীদের পেছনে ফেলে একটি দেশে সমউন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নারীদের প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেই ধারাবাহিকতায়, অপ্রচলিত খাত সমূহে নারীদের দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, একজন নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পরিবারের উৎসাহ ও সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষদের অনুরোধ করি আপনার কন্যা, স্ত্রী কিংবা বোনকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে সহযোগিতা করুন। কারণ নারীকে বাদ দিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। 

মাহবুবুল অলম আরও বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন এখন আর শুধু স্বপ্ন না, এটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নারীদের আরও বেশি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

সেমিনারে জানানো হয়, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের দিক থেকে বিশ্বের ১৪৬ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ১২২, ১২৬ এবং ১৩৯ তম। 

এমন পরিস্থিতিতে, রাজনীতির পাশাপাশি অন্যান্য সূচকে নারীর অংশগ্রহণ ও উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক। তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। নারীদের প্রযুক্তি, কারিগরি এবং বিশেষায়িত দক্ষতা উন্নয়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের প্রশিক্ষণ কাঠামোর আধুনিকায়নে কাজ করছে।

সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে এফবিসিসিআই তার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে আশ্বস্ত করেন সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আমিন হেলালী। দেশের নারী উদ্যোক্তা ও কর্মজীবী নারীদের নিয়ে একটি সমৃদ্ধ তথ্যভান্ডার তৈরিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি শমী কায়সার।

সেমিনারে অংশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আয়ের দিক থেকে নারী পুরুষের মধ্যে এখনও একটা বড় বৈষম্য রয়ে গেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে বিবেচনায় রেখে নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন তিনি। 

অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি বাস্তবায়নে নতুন নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরির ওপর জোর দিয়ে এফবিসিসিআই’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করতে নারীদের জন্য কর সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র পরিচালকবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, নারী উদ্যোক্তাবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রমুখ। 

যাযাদি/ এসএম