জমি ও দলিলমূল্যের মধ্যে ব্যবধান কমানোর উদ্যোগ

খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন রাজস্ব বাস্তবায়ন বিভাগের

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২৫, ১৯:৫১

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
সাবেক এনবিআর অফিস: ছবি সংগৃহীত

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটসহ স্থাবর সম্পত্তির প্রকৃত বিক্রয়মূল্য ও দলিল মূল্যের ব্যবধান দূর করতে খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে রাজস্ব বাস্তবায়ন বিভাগ (সাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর)।  আগামী ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা। বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটের প্রকৃত মূল্য ও দলিল মূল্য যৌক্তিকীকরণের বিষয়ে ঘোষণা থাকতে পারে বলে জানা গেছে। 

আইন অনুযায়ী জমি ও ফ্ল্যাটের বিক্রয় মূল্যের ওপর নির্ধারিত কর পরিশোধ করার কথা বিক্রেতার। কিন্তু বাংলাদেশে এটি ক্রেতাকে পরিশোধ করতে হচ্ছে- সম্প্রতি ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমনটা জানিয়েছিলেন রাজস্ব বাস্তবায়ন বিভাগের সচিব আবদুর রহমান খান। 

এবিষয়ে সচিব আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা একটি কনসেপ্ট পেপার তৈরি করেছি। এতে দলিলমূল্য ও প্রকৃত মূল্যের ব্যবধান দূর করার জন্য বেশ কিছু কৌশল উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে আয়োজিত বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’

তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো যদি বাজারমূল্যের সঙ্গে মৌজা মূল্য হালনাগাদ করতে সক্ষম হয়, তাহলে সরকার আগামী বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটের করহার কমিয়ে দেবে। বাংলাদেশে জমি ও ফ্ল্যাটের প্রকৃত ক্রয়মূল্য ও দলিলমূল্যের ব্যবধান একটি ‘ওপেন সিক্রেট’। কালো টাকা বিনিয়োগ গোপন রাখা এবং কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্রেতা ও বিক্রেতারা প্রকৃত মূল্যের তুলনায় দলিলে অনেক কম মূল্য দেখান, যা সাধারণত নির্ধারিত মৌজা মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।

জানা গেছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সময়ও মৌজা মূল্য ও দলিল মূল্যের ব্যবধান কমানোর জন্য একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হয়নি। ওই সময় মুহিত বলেছিলেন, বিক্রয়মূল্যের তুলনায় দলিল মূল্য কম হওয়ায় সরকার শুধু রাজস্ব আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা নয়, দলিলে বিক্রয়মূল্য কম দেখানোর কারণে বিক্রেতার বিপুল পরিমাণ অর্থ অপ্রদর্শিত বা অবৈধ আয়ে রূপান্তর হচ্ছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে বলেন, মৌজা মূল্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হয় না। আবার একই মৌজায় বিভিন্ন রকম জমি থাকে, যার মূল্যে ব্যবধান অনেক। 

রাজধানীর গুলশান মৌজার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, গুলশান এভিনিউর জমি বা ফ্ল্যাটের দাম মাদানী এভিনিউর জমি ও ফ্ল্যাটের দামের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। ফলে গুলশান এভিনিউতে ফ্ল্যাটের দলিল করার সময় একই মৌজায় অবস্থিত মাদানী এভিনিউ এর মৌজা মূল্য মেনে কমদাম দেখানো হয়।

তিনি জানান, এই অসঙ্গতি দূর করতে রাজস্ব বাস্তবায়ন বিভাগ একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে, যা আইন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাজউকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। খসড়া নীতিমালায় জমির মৌজা মূল্য নিয়মিত হালনাগাদ, মৌজার আকার ছোট করা এবং জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে করহার যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাজারমূল্যের সঙ্গে মৌজামূল্য নিয়মিত সমন্বয় করা এবং মৌজার আকার ছোট করাসহ জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষেত্রে করহার কমানোসহ বিভিন্ন কৌশল খসড়া পলিসিতে থাকতে পারে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে দ্রুতই খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে।

যাযাদি/আর