ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই

সেমিনারে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২৫, ১৬:২৬

যাযাদি ডেস্ক
ঢাকা চেম্বার আয়োজিত সেমিনারে কথা বলছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি : সংগৃহীত

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ নিয়ে আমরা যতটা ভয় পাচ্ছি, তত ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি দায়িত্ব নিয়েই কথাটা বললাম। 

আজ শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতি ও বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘শুল্ক আরোপের প্রভাব আমাদের প্রতিযোগীদের (দেশ) ওপরেও পড়ছে। ফলে তুলনামূলক প্রতিযোগিতায় আমরা খুব বেশি হারছি না।’

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপকে ‘বিষাক্ত শুল্ক চিকিৎসা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে আসার পর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার পেছনে অর্থনীতির চেয়েও বেশি আছে রাজনীতি। 

কিন্তু পাল্টা শুল্ক আরোপের যে নীতি ট্রাম্প নিয়েছেন, তা সফল হবে কি না, সে বিষয়ে দৃঢ় সংশয় আছে তার। অর্থাৎ এই নীতি দিয়ে তিনি (ট্রাম্প) যে লক্ষ্য থেকে অর্জন করতে চাচ্ছেন, তা কার্যকর হবে বলে মনে করেন না তিনি। বাজার এই নীতি সেভাবে গ্রহণ করবে না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, যে নীতিতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা তেমন একটা সঠিক নয়। শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে যে সূচক (পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি) ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও কার্যকর কিছু নয়।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘তারা বলছে, পণ্যের ক্ষেত্রে যার সঙ্গে যত বাণিজ্য ঘাটতি, তার ওপর তত বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য তারা বিবেচনায় নেয়নি। আবার চলতি বছর যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে, পরবর্তী বছর তা একই থাকবে না, পরিবর্তিত হবে।’ 

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, তাহলে কী বছর বছর তারা শুল্কহার বদলাবে; বছর বছর শুল্ক বদলালে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীলতা দরকার, তা থাকবে না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নীতি যৌক্তিক না হলে তাকে স্থায়িত্ব দেওয়া খুবই কষ্টকর। বাজার তা গ্রহণ করে না। তবে দুর্যোগকে সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অনেক দিনের জমে থাকা যেসব সংস্কারের কথা আমরা বলে থাকি, এই দুর্যোগের সময়টা সেগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে বহুপক্ষীয় আলোচনার পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে। সে জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যতালিকা (এজেন্ডা) দেওয়া হয়নি।’

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক। 

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ ও বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান।