প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর 

 সই হতে পারে ১.০৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৫, ১৫:৪৮ | আপডেট: ২৬ মে ২০২৫, ১৬:০৩

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন জাপান সফরে (২৮ মে থেকে ৩০ মে) ১.০৭৪ বিলিয়ন ডলারের দুটি ঋণচুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, সফরের আগে দুটি ঋণচুক্তি ও একটি অনুদানচুক্তি চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি চলছে।

জানা গেছে, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৯২,০৭৭ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন বা সমপরিমাণ ৬৫৬.১৬ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, 'ইকোনমিক রিফর্ম অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স' শীর্ষক বাজেট সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৬৩,০০০ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন বা ৪১৮ মিলিয়ন ডলারের আরেকটি ঋণচুক্তি সই হতে পারে।

এছাড়া, 'ইমপ্রুভমেন্ট অব ইক্যুইপমেন্ট ফর এয়ার পলিউশন মনিটরিং' প্রকল্পের জন্য ৮৩৫ মিলিয়ন ইয়েন বা ৫.৪৪ মিলিয়ন ডলারের অনুদান চুক্তিও সই হওয়ার কথা রয়েছে।

ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রধান উপদেষ্টার সফরের সময় দুটি ঋণচুক্তি ও একটি অনুদানচুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। এসব চুক্তির আওতায় মোট ১.০৭৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়া যাবে। 

তিনি বলেন, "জাইকার প্রস্তুতকৃত খসড়া ঋণচুক্তি ইতোমধ্যেই আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর চুক্তির সার-সংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার সম্মতির জন্য পাঠানো হবে। এরপর আর কোনো বাধা থাকবে না।"

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আগামী ২৮ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল জাপান সফর করবে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনের ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পটি শুরুতে জি-টু-জি পদ্ধতিতে চীনের অর্থায়নে এবং সে দেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা ছিল। 

এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনও হয়। তবে চীনের অর্থায়নে ব্যয় বেশি ধরা পড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় যৌক্তিক করা হয়। কিন্তু চীনা ঠিকাদার নির্ধারিত ব্যয়কে অযৌক্তিক দাবি করে প্রকল্প বাস্তবায়নে আপত্তি জানায়। পরে বিকল্প অর্থায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার।

এর অংশ হিসেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর কাছে ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হয় এবং তাদের সম্মতি পাওয়া যায়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে একনেক সভায় জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪,২৫০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৮,৭৫৭ কোটি টাকা চীনের অর্থায়ন ধরা হয়েছিল। চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে ১০,৩০২ কোটি টাকার নির্মাণচুক্তি হয়েছিল। তবে ২০২১ সালে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি প্রকল্পে ২১৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় চিহ্নিত করে।

প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা  জানান, চীনের পরিবর্তে জাপানের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে ৬৫৬.১৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হবে। প্রকল্পে আরও বৈদেশিক ঋণ লাগতে পারে।  তিনি আরও জানান, "দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। বিস্তারিত ডিজাইন তৈরি হওয়ার পর প্রকল্পে মোট কত ঋণ লাগবে তা জানা যাবে। আগামী এক বছরের মধ্যে জাপানের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের বিস্তারিত ডিজাইন তৈরি করবে। পরবর্তী ধাপে জাপান অর্থায়ন করবে কি না, তা তখনই জানা যাবে।"

তিনি বলেন, "প্রকল্পের কাজ শুরু করতে প্রথম ধাপের ঋণচুক্তি সইয়ের চেষ্টা করছে ইআরডি। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় রেলওয়ে।"

অন্যদিকে, দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাজেট সহায়তা হিসেবে যে ৪১৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে জাপান, তার আলোচনা গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে ইআরডি সূত্র জানিয়েছে। ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড় নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বাজেট সহায়তা কর্মসূচিগুলোও আটকে ছিল। আইএমএফের কাছ থেকে জুন মাসে ঋণের কিস্তি ছাড়ের আশ্বাস পাওয়ার পর এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি জাপানের সঙ্গেও বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু হয়।

ইআরডি কর্মকর্তারা আরও জানান, বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীরা সাধারণত কোনো ঋণ বা বাজেট সহায়তা দেওয়ার আগে আইএমএফের অনুমোদন নেয়। যদিও দ্বিপাক্ষিক সহযোগীদের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা নেই, তবুও জাপান সাধারণত এই প্রক্রিয়া মেনে চলে।

চলতি অর্থবছরে এর আগেও জাপানের সঙ্গে ১.০৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ও অনুদান চুক্তি সই হয়েছে। এরমধ্যে ঋণ ৮৩০.৮৮ মিলিয়ন ডলার এবং অনুদান ২০৫.৪৯ মিলিয়ন ডলার।  এ চুক্তির মধ্যে যমুনা রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প এবং মাতারবাড়ি আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের ঋণও অন্তর্ভুক্ত।

গত অর্থবছর শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে জাপানি ঋণের স্থিতি ছিল ১১.২৫০ বিলিয়ন ডলার, যা উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। খবর-টিবিএস