বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

সবগুলো দুর্বল ব্যাংক একসঙ্গে একীভূত করা হবে না: গভর্নর

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
  ২৭ মে ২০২৫, ১৮:০১
সবগুলো দুর্বল ব্যাংক একসঙ্গে একীভূত করা হবে না: গভর্নর
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, সবগুলো ব্যাংক (দুর্বল) একসঙ্গে একীভূত করা হবে না। ধীরে ধীরে হবে। প্রথমে সরকার ব্যাংকগুলো অধিগ্রহণ করবে, এরপর বিদেশী বড় বিনিয়োগকারীদের এনে তাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য আমানতকারীদের স্বার্থ দেখা।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলেও কারো ব্যবসায়িক কোনো হিসাব জব্দ করা হয়নি বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ‌বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বর্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, ‌আমরা কোনো বিজনেস অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করিনি। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো হিসাবের লেনদেনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে না। তারা (প্রতিষ্ঠানের মালিক) দোষী হলেও কোনো ব্যবসা আমরা আটকাচ্ছি না। তবে ব্যবসার মাধ্যমে যাতে কোনো টাকা পাচার না হয়, সেটা ঠিক রেখে আমরা ব্যবসা চলতে দিচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় জটিলতা বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালে জড়িত। এসব সমস্যা কাটাতে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সে প্রতিটা সংস্থার প্রতিনিধি আছে। তারপরও টাস্কফোর্সকে আইনগত বিধিবিধানে নিয়ে আসার জন্য নতুন আইনের সংশোধন করতে যাচ্ছি। অর্থ পাচার আইনের মধ্যেই টাস্কফোর্সকে সরকারি সংস্থা হিসেবে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। এ সংস্থা সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। এতে আমলাতান্ত্রিক বেড়াজাল দূর হবে।

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আসার সময়সীমা সম্পর্কে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, টাকা ফেরত আসতে ৩-৫ বছর লাগবে। এটা নিয়ে কোনো যদি, কিন্তু নেই। লন্ডন থেকে আসার পর (মার্চ মাসে) বলেছিলাম, আমরা ৬ মাসের মধ্যেই কিছু সম্পদ (বিদেশে পাচারকৃত) জব্দ দেখতে চাই। দুই মাসের মধ্যেই কিছু তো পেয়েছি। সামনে আরো পাব।

তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বছরে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সর্বোচ্চ সম্পদ জব্দ করা। যাতে এগুলো অন্য কোথাও পাচার না হয়ে যায়। অর্থ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন আইনি জটিলতা আছে। আমাদেরকে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই কাজ করতে হবে। বিদেশের আইনের সঙ্গে আমাদের দেশের আইনের অনেক পার্থক্য আছে। আমাদেরকে আগেই ভাবতে হবে, কার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করব আর কার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা। দুটোকে একেবারে আলাদা রাখতে হবে। বিদেশের আদালতে তথ্য প্রমাণ ঠিকভাবে সংগ্রহ করে পৃথক করতে হবে। এক মামলার সঙ্গে আরেক মামলা সাংঘর্ষিক হয়ে গেলে মামলা ওখানেই শেষ। এক পা-ও আর সামনে এগোবে না।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান কর্মকর্তা এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম। তিনি জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিএফআইইউতে ১৭ হাজার ৩৪৫টি সন্দেহজনক লেনদেন বা কার্যক্রম প্রতিবেদন জমা পড়েছে। এ সংখ্যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। একই সময়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী, নিয়ন্ত্রক ও সরকারি অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ১ হাজার ২২০টি তথ্য আদান প্রদান করেছে। এ সংখ্যাটিও আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত বিএফআইইউতে ১৮ হাজার ২৫টি সন্দেহজনক লেনদেন ও ৯ হাজার ১০৫টি সন্দেহজনক কার্যক্রমের প্রতিবেদন জমা পড়েছে বলেও জানান শাহীনুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে বিএফআইইউর পরিচালক মুহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, গত বছরের জুলাই মাসের পর বিএফআইইউর কাজ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সন্দেহজনক প্রতিবেদনও অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন পাঠানো চার গুণ বেড়েছে। অর্থ পাচার ধরা ও উদ্ধার করা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে