রেমিট্যান্স-রপ্তানিতে চাঙা অর্থনীতি
ঈদের আগে রিজার্ভ ছাড়াল ২৬ বিলিয়ন ডলার
প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৫, ১০:২৮

ঈদুল আজহার প্রাক্কালে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ঊর্ধ্বমুখী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪ জুন পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (গ্রস রিজার্ভ) দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুসারে এ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। তবে ব্যবহারযোগ্য বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এখনো ১৬ বিলিয়নের ঘরে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চাপ অনেকটা কমেছে। বর্তমানে ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারভিত্তিক হলেও তা ১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। এতে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের চাহিদামাফিক ঋণপত্র খুলতে পারছে, যার প্রভাবে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
গত মে মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিল পরিশোধের কারণে রিজার্ভ কিছুটা কমে এলেও এরপর থেকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের জোয়ারে আবারও তা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও জানা যায়, চলতি জুন মাসের প্রথম তিন দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি রেমিট্যান্স, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। মে মাসে পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল ২৯৭ কোটি ডলার, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক মাসের প্রবাসী আয়। মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত (৩ জুন পর্যন্ত) দেশে এসেছে ২ হাজার ৮১১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পেছনে অবৈধ হুন্ডি চ্যানেল বন্ধে সরকারের কঠোর নজরদারি এবং উৎসবকেন্দ্রিক অর্থ প্রেরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রমজান ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ পাঠাচ্ছেন।
অন্যদিকে, পণ্য রপ্তানিতেও রয়েছে দৃঢ়তা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশের মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলারে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। কেবল মে মাসেই রপ্তানি হয়েছে ৪৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২০২১ সালের আগস্টে, ৪৮ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে বিভিন্ন কারণে তা কমতে থাকে। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে টানা আট মাস রেমিট্যান্স প্রবাহ দুই বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য একটি বড় ইতিবাচক বার্তা।