ক্রিকেটার সাকিবের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

শেয়ারবাজার থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০২৫, ১৯:৪৩ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ২১:১৯

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
ছবি: সংগৃহীত


শেয়ারবাজারে কারসাজির মাধ্যমে ২৫৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। মামলাটি দায়ের করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন।

এর আগে সোমবার (১৬ জুন) আদালত সাকিবসহ অভিযুক্ত ১৫ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অসৎ উদ্দেশ্যে দ্রুত আর্থিক লাভের আশায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ও বিধি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর ১৭ ধারা) লঙ্ঘন করে নিজেদের বিও অ্যাকাউন্টে অসাধু, অবৈধ ও অনৈতিক উপায়ে একাধিক লেনদেনের মাধ্যমে বাজারে কারসাজি করেন। ফটকা ব্যবসা, জুয়া এবং গুজব ছড়িয়ে বাজারে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে তারা অর্থ আত্মসাৎ করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারে ধারাবাহিকভাবে কেনাবেচার মাধ্যমে কৃত্রিম দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তারা শেয়ারবাজার থেকে ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎ করেন এবং অস্বাভাবিক রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে 'প্রসিড অব ক্রাইম' হিসেবে সেই অর্থ উত্তোলন করেন।

এজাহারে সাকিবের সম্পৃক্ততার বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়, আসামি মো. আবুল খায়ের ওরফে হিরুর কারসাজিকৃত তিনটি কোম্পানি—প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ও সোনালী পেপারস লিমিটেড—এর শেয়ারে সাকিব বিনিয়োগ করেন এবং কারসাজিতে যোগ দেন। তিনি সরাসরি সহযোগিতা করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওই শেয়ারে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করেন এবং রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা অপরাধলব্ধ অর্থ হিসেবে আত্মসাৎ করেন।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, 'তিনটি কোম্পানির শেয়ারে সাকিব বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগ কার্যক্রমে মার্কেট ম্যানিপুলেশন করা হয়েছে, এবং তিনি এতে জড়িত।'

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন—সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজী ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ুন কবির ও তানভির নিজাম।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামি আবুল খায়ের হিরু তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সহায়তায় ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত ২১ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকার উৎস গোপন করে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে স্থানান্তর করেন। এছাড়া তিনি ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।

এ ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০(বি)/১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে গত এপ্রিলে সাকিবের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক। উপপরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি দল এ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে।