মার্কিন বাণিজ্যনীতির প্রভাবে কমেছে সিঙ্গাপুরের রপ্তানি
প্রকাশ | ২০ জুন ২০২৫, ১৭:২০ | আপডেট: ২০ জুন ২০২৫, ১৭:৩৩

গত মাসে সিঙ্গাপুর থেকে রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে মার্কিন বাণিজ্যনীতির অনিশ্চিত অবস্থা। ওই সময় সিঙ্গাপুর থেকে বিশ্বের শীর্ষ এ অর্থনীতিতে রপ্তানি কমেছে ২০ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এপ্রিলে রফতানির যে অগ্রিম ক্রয়াদেশ দেখা গিয়েছিল তা মে মাসে কমে এসেছে। এছাড়া ভবিষ্যৎ বাণিজ্য পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
সিঙ্গাপুরের আমদানি-রফতানিবিষয়ক সরকারি সংস্থা এন্টারপ্রাইজএসজি গতকাল জানিয়েছে, মে মাসে দেশটি থেকে জ্বালানি তেল-বহির্ভূত অভ্যন্তরীণ রফতানি (এনওডিএক্স) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যা কিনা এপ্রিলে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছিল।
মে মাসে সিঙ্গাপুর থেকে ইলেকট্রনিকস রফতানি বাড়লেও ইলেকট্রনিকস-বহির্ভূত পণ্যের রফতানি কমেছে।
রয়টার্সের বিশ্লেষকরা মে মাসে এনওডিএক্সে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তারা ধারণা করেছিলেন, এপ্রিলের মতোই অগ্রিম ক্রয়াদেশ অব্যাহত থাকবে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চলমান ৯০ দিনের শুল্কবিরতির সুযোগে রফতানি বাড়বে।
মালয়েশিয়াভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আরএইচবি গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ বারনাবাস গান বলেন, ‘৯০ দিনের শুল্ক বিরতি সত্ত্বেও আগামী মাসগুলোয় রফতানি আরো কমে যেতে পারে। কারণ বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাসের পাশাপাশি উচ্চ শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা ব্যয় কমতে পারে।’
৮ জুলাই শুল্ক বিরতির মেয়াদ শেষ হবে। বারনাবাস গানের মতে, এতে সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য পারফরম্যান্সের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া শীর্ষ অর্থনীতিগুলোয় ধীর প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যবিষয়ক উত্তেজনার কারণে সিঙ্গাপুরের সামগ্রিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবণতা নেতিবাচক ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে চলতি বছর জ্বালানি তেল-বহির্ভূত অভ্যন্তরীণ রফতানি মোটামুটি স্থির থাকতে পারে।
অন্যদিকে অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বিশ্লেষক শিয়ানা ইউর মতে, এপ্রিলের শক্তিশালী রফতানির পর মে মাসের পরিসংখ্যান একধরনের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসা নির্দেশ করে। ২০২৫ সালে রফতানিতে ধসের আশঙ্কা কম থাকলেও রফতানি স্থিতিশীলতা ক্রমে কমবে।
যুক্তরাষ্ট্র ৯ এপ্রিল চীন ছাড়া অন্য সব দেশের ওপর রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ স্থগিত করে। পরে ১২ এপ্রিল ইলেকট্রনিকস পণ্যের ওপরও একই ধরনের শুল্কবিরতি দেয়া হয়। এরপর ১২ মে পরস্পরের পণ্যে ৯০ দিনের জন্য শুল্ক কমিয়ে আনার চুক্তিতে পৌঁছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
যুক্তরাষ্ট্রে সিঙ্গাপুরের মোট রফতানির ১০ শতাংশের বেশি ফার্মা পণ্য। সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী গান কিম ইয়ং মে মাসে জানান, যুক্তরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের রফতানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক থেকে সরে আসছে না। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে থাকা ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে ছাড় দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সিঙ্গাপুর থেকে জ্বালানি তেলবহির্ভূত অভ্যন্তরীণ রফতানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ২ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গেছে।
তবে সতর্ক করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউওবির সহযোগী অর্থনীতিবিদ জেস্টার কোহ বলেন, ‘অগ্রীম ক্রয়াদেশের ফলে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য মন্দা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ব্যবসা ও ভোক্তা আস্থাকে আরো দুর্বল করতে পারে।’