জুনের শেষে ৩৬০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রত্যাশা
জাপানসহ ৩ সংস্থা থেকে এই অর্থ পাওয়া যেতে পারে
প্রকাশ | ২১ জুন ২০২৫, ১২:৩৫

চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) শেষ নাগাদ, ৩.৬১৮ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হতে পারে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বৈশ্বিক ঋণদাতাদের থেকে ৩০ জুনের মধ্যেই এই অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই বাজেট সহায়তার মধ্যে রয়েছে: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ; পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), এবং জাপান থেকে প্রত্যাশিত অর্থ ছাড়।
বাংলাদেশের ব্যাংকখাত শক্তিশালীকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বৃহস্পতিবার ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পলিসি-বেজড ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, আজ শুক্রবার (২০ জুন) এডিবির সঙ্গে ৯০০ মিলিয়ন ডলারের এ দুটি বাজেট সহায়তা ঋণ চুক্তি সই হবে। এবং সব প্রক্রিয়া শেষে এক সপ্তাহের মধ্যের মধ্যে এই অর্থছাড় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্মস সাবপ্রোগ্রাম-১ এর আওতায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং ক্লাইমেট রিসপন্সিভ ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সিআরইডি)- সাবপ্রোগ্রাম-২ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ৪০০ মিলিয়ন পাওয়া পাওয়া যাবে।
এদিকে, বিশ্বব্যাংকের বোর্ড বর্তমানে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড রিকভারি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট-২ পর্যালোচনা করছে। যা অনুমোদন পেলে কয়েকদিনের মধ্যেই চুক্তি সই এবং জুনের মধ্যেই অর্থ ছাড় হতে পারে।
অন্যদিকে, আইএমএফ-এর বোর্ড ২৩ জুন ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির—মোট ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় পর্যালোচনা করবে। অনুমোদন পেলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অর্থ ছাড় পাওয়া যেতে পারে।
২৩ জুন বেইজিংয়ে এআইআইবি'র বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন বা ২৪ জুন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ক্লাইমেট রিসপন্সিভ ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সিআরইডি)- সাবপ্রোগ্রাম-২ এর অধীনে বাজেট সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এই অর্থ পাওয়া যাবে চলতি মাসের শেষদিকে।
মে মাসের শেষদিকে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের পর, বাংলাদেশ ৪১৮ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা ঋণ নিশ্চিত করেছে, যা প্রদান করা হচ্ছে 'ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোন ফর ইকোনমিক রিফর্ম অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স' কর্মসূচির অধীনে। এই ঋণের অর্থ আগামী সপ্তাহেই ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া, এপ্রিলে বাংলাদেশ ওপেক ফান্ড এর সঙ্গে 'স্ট্রেংদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রাম'- শীর্ষ্ক কর্মসূচির আওতায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণচুক্তি সই করে। ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, ওপেক ফান্ডের এদেশে স্থানীয় অফিস না থাকায়—কিছু প্রশাসনিক জটিলতায় অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হয়েছে। সেই জটিলতা কাটিয়ে এই ঋণটিও আগামী সপ্তাহে ছাড় হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছর (২০২৪-২৫) এ পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ১.১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাংকের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ, যা গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট'- এর আওতায় দেওয়া হয়, এবং চলতি মাসের শুরুতে এডিবি'র দেওয়া ৬০০ মিলিয়ন ডলার, যা স্ট্রেংদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (সাবপ্রোগ্রাম-১) এর আওতায় এসেছে।
মূলত বাংলাদেশ কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে বাজেট সহায়তা নেওয়া শুরু করে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরে যা গতি পায়।
বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ বিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১.০৯ বিলিয়ন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২.৫৯ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১.৭৬ বিলিয়ন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২.০৩ বিলিয়ন ডলার বাজেটে সহায়তা পেয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা- ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, "বাজেট ঘাটতি পূরণে বাজেট সহায়তা নেওয়া হয়। বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং আমাদের রাজস্ব আয় কম হওয়ার কারণে, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ হিসাবে বাজেট সহায়তা নিতে হয়। তবে এই ধরনের ঋণের ওপর অত্যধিক নির্ভরতায়—আগামী বছরগুলোতে আমাদের ঋণের দায় বাড়বে। এ কারণে বাজেট সহায়তার বিষয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে। বাজেটে সহায়তা অর্থ যেন উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় করা হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।"