নবায়নযোগ্য জ্বালানি: লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে

আইইইএফএ-এর প্রতিবেদন

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২৫, ২০:৪৬

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
আইইইএফএ-এর লোগো | ছবি: আইইইএফএ'র এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে

নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে ২০৩০ সালে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে বছরে ৯৮০ মিলিয়ন বা প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী এ অর্থ প্রয়োজন হবে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক জ্বালানি খাতে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)।

আইইইএফএ-এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি অনুমোদিত নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশে বড় আকারের বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এজন্য নীতিমালার মাধ্যমে একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

আজ বুধবার (২৫ জুন) আইইইএফএ তাদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ সংক্রান্ত এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক ও বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বিষয়ক আইইইএফএ’র প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে এ বিপুল অর্থের চাহিদা শুধু সরকারি অর্থায়নের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়, এজন্য ব্যাপক বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন।’

বলা হয়, নবায়নযোগ্য খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশকে বছরে ৯৮০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হতে পারে। আর ২০৪০ পর্যন্ত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বছরে বিনিয়োগের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। 

তবে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নীতিগত অনিশ্চয়তা, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, মুদ্রা ঝুঁকি ও অবনতিশীল সার্বভৌম ঋণমান এ খাতে বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে বলে আইইইএফএ জানায়।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ছোট প্রকল্পে (ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ, সৌরসেচ ইত্যাদি) বিনিয়োগ বাড়াতে হলে, ঝুঁকি প্রশমনের স্কিম এবং বিশেষায়িত সবুজ অর্থায়ন তহবিল গঠন ও আমদানি শুল্ক ছাড় দেওয়া যেতে পারে। 

ইউটিলিটি-স্কেল প্রকল্পে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে স্থিতিশীল নীতিমালা ও বিনিয়োগের পরিবেশ অপরিহার্য।

সরকারের নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। 

এ লক্ষ্যপূরণের বিষয়ে আইইইএফএ বলছে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৯৩৩ থেকে ৯৮০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০৩১-৪০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১ দশমিক ৩৭ থেকে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।

সব সংকট কাটাতে বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুদ্রা ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশেষ তহবিল গঠন করার পরামর্শ দিয়েছে আইইইএফএ।

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত সরকারের সময় প্রতিযোগিতাবিহীনভাবে অনুমোদিত ৩১টি বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিগত স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যারান্টি পুনর্বহাল, প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট ভূমি বরাদ্দ এবং ব্যাংকিং ও সার্ভিস সেক্টরের সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সরকার সম্প্রতি সৌর বিদ্যুতের ইনভার্টারের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। একইভাবে ছোট আকারের সৌর প্রকল্পে ব্যবহৃত প্যানেল, এফআরপি ওয়াকওয়ে, মাউন্টিং স্ট্রাকচার ও ডিসি কেবল এর শুল্ক কমালে এ খাতে যথেষ্ট সফলতার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবুজ তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়নের পরিবর্তে আগাম অর্থায়নের ব্যবস্থা চালু করলে বিলম্ব কমবে এবং অর্থ বিতরণ প্রক্রিয়া সহজ হবে।