চট্টগ্রাম বন্দর: অঘোষিত ধর্মঘট অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৪

যাযাদি ডেস্ক
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর

দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির পর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও দেশের প্রধান কাস্টমস অফিসগুলো আবারও সচল হয়েছে। 

তবে এই অচলাবস্থার কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার সকাল থেকে বন্দর ও কাস্টম হাউজগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলেও, জমে থাকা কয়েক হাজার কন্টেইনার খালাসে দেখা দিয়েছে মারাত্মক চাপ। 

বন্দরসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার কন্টেইনার ওঠানামা করলেও ধর্মঘটের কারণে এই সংখ্যা নেমে আসে প্রায় শূন্যের কোঠায়।

চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এখন ২৪ ঘণ্টা শিফটে কাজ করছি, যাতে backlog সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু এর প্রভাব পড়েছে দেশের খাদ্য, ঔষধ, ইলেকট্রনিকস ও শিল্প কাঁচামালের সরবরাহে।”

ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ ও শঙ্কা : বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)-এর সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের প্রতিদিনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ৪৮ ঘণ্টায় ভেঙে পড়েছে। 

পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, কারণ সময়মতো কাঁচামাল না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে।”

ঢাকার একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বলেন, “আমরা ১২ কন্টেইনার কাঁচামাল পাইনি সময়মতো, ফলে পুরো একটি উৎপাদন লাইন বন্ধ ছিল। এতে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।”

ধর্মঘটের কারণ ও পরিপ্রেক্ষিত : জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক প্রস্তাবিত কিছু নতুন নিয়মনীতির প্রতিবাদে কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তারা এই ধর্মঘট পালন করেন। তারা অভিযোগ করেন, এই নীতিমালায় তাদের পেশাগত স্বাধীনতা খর্ব হয়।

তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর মধ্যে আলোচনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

সরবরাহ ব্যবস্থাকে টেকসই রাখতে এবং বন্দরের অচলাবস্থা এড়াতে স্থায়ী সমাধানের দাবিও উঠছে।

বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেন, “এ ধরনের সংবেদনশীল খাতে অঘোষিত ধর্মঘট জাতীয় অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। সংলাপ, পূর্ব প্রস্তুতি ও বিকল্প ব্যবস্থার দিকে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।”

চট্টগ্রাম বন্দর সচল হলেও ধর্মঘটের অভিঘাত এখনও কাটেনি। ব্যবসায়ীরা ক্ষতির হিসাব কষছেন, আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এ ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে যেন না হয়, সে জন্য এখনই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।