ট্রাম্পের নীতিতে হুমকির মুখে ডলার: ২০২৫-এ রেকর্ড দরপতন
প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৫

১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় দরপতনের মুখে পড়েছে মার্কিন ডলার। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ডলারের দরপতন রীতিমতো নজিরবিহীন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্থির ও বিতর্কিত অর্থনৈতিক নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা ডলার বিক্রি করছেন।
এতে ডলারের ‘সেফ হ্যাভেন’ বা নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে অবস্থানও চাপে পড়েছে।
ডলার ইনডেক্স—যা ইউরো, পাউন্ড, ইয়েনসহ ছয়টি প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান পরিমাপ করে—২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ১০.৮ শতাংশ কমেছে।
এই পতনের পেছনে রয়েছে ট্রাম্পের শুল্কনীতি, ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং বিশাল কর সংস্কার বিল নিয়ে উদ্বেগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ট্যাক্স বিল আগামী দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণকে ট্রিলিয়ন ডলারে বাড়িয়ে দেবে। এতে ট্রেজারি বন্ড মার্কেটেও বিনিয়োগ কমে গেছে।
২০২৫ সালের ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে।
এতে মার্কিন অর্থনীতির প্রতি আস্থা হ্রাস পায়। ‘এসঅ্যান্ডপি ৫০০’ সূচক মাত্র তিন দিনে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার হারায়। ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য ও হস্তক্ষেপও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে।
এছাড়া, ট্রাম্পের বড় কর বিল ও ঋণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ-টু-জিডিপি অনুপাত বাড়িয়ে দেবে, যা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করছে।
এ অবস্থায়, অনেকেই ধারণা করছেন, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ চলতি বছর আরও দুই থেকে তিনবার সুদের হার কমাতে পারে। এতে ডলারের মান আরও দুর্বল হবে।
ডলার দুর্বল হওয়ায় বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনা কেনা বাড়িয়েছে। ফলে সোনার দাম পৌঁছেছে রেকর্ড উচ্চতায়। অন্যদিকে, ডলার দুর্বল হওয়ায় মার্কিন রপ্তানি সস্তা হতে পারে, তবে শুল্ক নীতির কারণে সেই সুবিধা পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই পরিস্থিতি তুলনামূলক ইতিবাচক। জাম্বিয়া, ঘানা বা পাকিস্তানের মতো ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর ডলার-ভিত্তিক ঋণ পরিশোধ সহজ হবে।
তেল, ধাতু ও কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া ও চিলিও লাভবান হবে, কারণ কম ডলারে এসব পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি পাওয়া যাবে।
এদিকে ইউরো ১৩ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে। ইউরোপের শেয়ারবাজারও ১৫ শতাংশ বেড়েছে, যা ডলারে হিসাব করলে ২৩ শতাংশ লাভ।
যদিও ডলার এখনো বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ কারেন্সি, তবুও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে এর প্রতি আস্থা কমছে।
ব্যাংক জে সাফ্রা স্যারাসিনের প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্স্টেন জুনিয়াস বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এখন বিনিয়োগের জন্য কম আকর্ষণীয়। সেই সাথে, মার্কিন সম্পদও আগের মতো নিরাপদ নয়।”
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, বিনিয়োগকারীরা যদি ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখেন, তবে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ডলারের পতন আরও গভীর হতে পারে।
সূত্র: আল জাজিরা, আলেক্স কোজুল-রাইট (অর্থনৈতিক বিশ্লেষক)