চট্টগ্রাম বন্দর ৪৮ বছরের কন্টেইনার পরিবহনে রেকর্ড ভাঙল

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭:২৯ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭:৩০

চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি : যায়যায়দিন

২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং এ রেকর্ড করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার টিইইউএস আর কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ কোটি ৭ লাখ মেট্রিক টন। কন্টেইনার পরিবহনে বিগত ৪৮ বছরের ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর ৪ হাজার ৭৭টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে।

বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এই সাফল্যের মূলে রয়েছে বন্দর পরিচালনা-সংশ্লিষ্টদের সঠিক নির্দেশনা ও তদারকি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা। এছাড়া বন্দরের অটোমেশন সার্ভিস সুবিধা, ই-গেট পাস চালু, কনটেইনার অপারেটিং সিস্টেম আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নও হ্যান্ডলিং কার্যক্রমকে গতিশীল করেছে। একইসঙ্গে দ্রুত কন্টেইনার ডেলিভারি নেওয়াসহ নানা কাজে বন্দর ব্যবহারকারীদেরও সার্বিক সহযোগিতা ছিল।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, মাত্র ৭ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার হ্যান্ডলিংকারী পোর্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এরপর প্রতি বছর নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বিশ্বব্যাপী কন্টেইনারে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধির সাথে সাথে চট্টগ্রাম বন্দরেও বেড়েছে কন্টেইনার জাহাজের আনাগোনা, বেড়েছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ। বিগত ৪৮ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের অবকাঠামোসহ প্রযুক্তিগত সুবিধায় সমৃদ্ধ হয়েছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ডেডিকেটেড জেটিসহ টার্মিনাল নির্মিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বর্তমানে তিনটি কন্টেইনার টার্মিনাল রয়েছে। এছাড়া জেনারেল কার্গো বার্থের ছয়টি জেটিতেও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কার্যক্রম চলে। এই হিসেবে বন্দরের চারটি কন্টেইনার টার্মিনাল রয়েছে। কী গ্যান্ট্রি ক্রেন, স্ট্যাডল ক্যারিয়ারসহ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি বন্দরের বহরে যুক্ত হয়েছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বন্দর হিসেবে বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান পোক্ত। ইতোমধ্যে বিশ্বের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংকারী ১০০ শীর্ষ বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৭তম। লয়েড’স লিস্টে আগামী বছর চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান আরো ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক অর্থবছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ছিল: ২০২০-২১ সালে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২টিইইউ, ২০২১-২২ সালে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬টিইইউ, ২০২২-২৩ সালে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮টিইইউ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫টিইইউ।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বর্তমানে মোট আমদানির ২৩ শতাংশ হয় কন্টেইনারে। বাকি ৭৭ শতাংশ আসে বাল্ক পণ্য, তেল ও কেমিকেল ট্যাংকারে। বন্দরে ভিড়েছে এমন জাহাজের মধ্যে ৪৫ শতাংশই কন্টেইনারবাহী, ৪৫ শতাংশ বাল্ক ক্যারিয়ার এবং ১০ শতাংশ তরল পণ্যবাহী জাহাজ। দেশের মোট কন্টেইনার বাণিজ্যের প্রায় ৯৯ শতাংশ পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বাকিটা পরিচালিত হয় মংলা বন্দর থেকে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি মানেই বাণিজ্য বেড়েছে, যার সরাসরি প্রতিফলন পড়ে রাজস্বে। এ ধারা ধরে রাখতে হলে কর্মসূচির মাধ্যমে বন্দর ও কাস্টমস কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। তবেই অর্থনীতি আরও এগোবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, 'এই পরিমাণ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং আমাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ অর্জনে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।