গ্যাস সংযোগ পুনর্বিন্যাসে সরকারকে ১০ প্রস্তাব শিল্পমালিকদের
প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৪

শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্যাস সংযোগ পুনর্বিন্যাসে তিতাসের অনুমতির বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা থেকে অব্যাহতি পেতে চান শিল্পমালিকরা৷ দেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাত শিল্পমালিকদের শীর্ষ ৬টি সংগঠন কারখানায় গ্যাস সংযোগের পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে সরকারি বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চেয়ে ১০টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে।
শিল্পমালিকরা বলছেন, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে শিল্পে অধিক কর্মক্ষম ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এতে জ্বালানি দক্ষতা ও উৎপাদন বাড়বে। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। চিঠির একটি অনুলিপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকেও পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে তারা বলছেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল রাখার লক্ষ্যে গ্রাহকের আঙিনায় ক্যাপটিভ রান ও শিল্প রানের স্থাপনা পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে পুনরায় তিতাসের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই বলে তারা মনে করেন। এক্ষেত্রে তিতাসের আগের অনুমোদিত ঘণ্টাপ্রতি লোড, মাসিক লোড ও বহির্গমন চাপের বৃদ্ধি বা হ্রাসের প্রয়োজন হয় না।
চিঠিতে আরও বলা হয়, তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে স্থাপন করা হয়। ভবন নির্মাণ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি, স্থাপন, জনবল নিয়োগের পর শ্রমিকের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়।
বর্তমানে গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে তৈরি পোশাক কারখানা ও টেক্সটাইল মিলগুলো গ্যাসচালিত স্থাপনাসমূহ সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারছে না এবং উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ শতাংশ কম হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর রপ্তানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে কারখানাগুলো অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া দ্রুত উৎপাদন চালু করার জন্য সম্পূর্ণ নিজস্ব খরচে বিতরণ লাইন, সার্ভিস লাইন এবং অভ্যন্তরীণ লাইন নির্মাণ করতে ব্যাংকের অর্থায়নে আনুষঙ্গিক প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে সই করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান; বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান; বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল; বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান হোসেন মাহমুদ; বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এবং ঢাকা চেম্বার সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
সংগঠনগুলোর দেওয়া ১০ প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—
১. আরএমএস রুমের মিটার এবং রেগুলেটর থেকে গ্রাহকের আঙিনায় অবস্থিত যাবতীয় স্থাপনার (অভ্যন্তরীণ পাইপলাইন ইত্যাদিসহ) কোনো কিছুই তিতাসের আওতাধীন থাকবে না। অনুমোদিত লোড, বহির্গমন চাপ অপরিবর্তিত রেখে গ্রাহক তার মর্জিমতো, তিতাসের কোনোরূপ অনুমতি ছাড়া, এসব স্থাপনা পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকোচন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, ব্র্যান্ড পরিবর্তন, ইত্যাদি করতে পারবে। এই সব কোনো ব্যাপারেই তিতাস কোনো কৈফিয়ত চাইতে পারবে না।
২. ১০ মেগাওয়াট এবং এর অধিক ক্যাপটিভ রানে গ্যাস ব্যবহারের নতুন সংযোগ অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ছাড়পত্র নেওয়ার বিষয়ে আগের সরকারের (শেখ হাসিনা) এই সংক্রান্ত নির্দেশনাটি বাতিল করতে হবে।
৩. একই আঙিনায় অবস্থিত, একই মালিকানাধীন একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত, কিন্তু গ্রাহকের বিবেচনায় অব্যবহৃত লোড, আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে একই আঙিনায় অবস্থিত, একই মালিকানাধীন অন্য আরেকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা যাবে এবং এ শিল্পপ্রতিষ্ঠান নতুন স্থাপনা হলেও এই কাজকে নতুন সংযোগ বলে কালক্ষেপণ করা যাবে না। এই অনুমোদন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একক সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেবেন।
৪. একই মালিকানাধীন একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের, গ্রাহকের বিবেচনায় অব্যবহৃত লোড, আংশিক বা, সম্পূর্ণভাবে, সম্পূর্ণ সাপেক্ষে, একই মালিকানাধীন কিন্তু অন্য জায়গায় অবস্থিত আরেকটি কারখানায় স্থানান্তর করা যাবে। এই অনুমোদন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একক সিদ্ধান্তে হবে।
৫. অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চালু করা যেতে পারে। এতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করে স্বয়ংক্রিয় যাচাই সম্ভব।
৬. বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমতিতে লোড পুনর্বিন্যাস হয়। তবে ক্যাপটিভ ও শিল্প লোডের মধ্যকার পুনর্বিন্যাস বিদ্যমান আইনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা রয়েছে। এ অবস্থায় অভ্যন্তরীণ পুনর্বিন্যাসের জন্য পুনরায় ঊর্ধ্বতন অনুমতি বাদ দিয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে অর্থাৎ স্থানীয় গ্যাস অফিসের মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।
৭. ইভিসি মিটার স্থাপন বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অনলাইন ফর্ম এবং নির্দিষ্ট ডকুমেন্ট চেকলিস্ট থাকলে গ্রাহক সহজে আবেদন দাখিল করতে পারবে।
৮. প্রি-অ্যাপ্রুভড মিটার লিস্ট, অনুমোদিত ব্র্যান্ড/মডেল লিস্ট থাকলে নতুন মিটার অনুমোদনে সময় কমে যাবে এবং যথেষ্ট পরিমাণ এবং বিভিন্ন মডেলের মিটার স্টকে রাখতে হবে।
৯. মিটার পরিবর্তনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা যেমন ৩-৫ কার্যদিবসের মধ্যে ইনস্টলেশন সম্পন্ন করতে হবে।
১০. লো প্রেসার রেগুলেটরের অনুমোদন স্থানীয় অফিসের মাধ্যমে অটোমেটিক রেগুলেটর অনুমোদন নিতে