শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৫৪ পেরিয়ে ৫৫ তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সাইফুল ইসলাম. চবি
  ১৮ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৩৮

১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে হাঁটিহাঁটি পা পা করে ৫৪ পেরিয়ে ৫৫তে পা রাখলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়(চবি)।গতকাল (১৮ নভেম্বর) বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হয় ৫৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।বলা হয়ে থাকে শিক্ষা আর পর্যটনের এক অনন্য সমন্বয়। কিংবা পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজে চলছে সর্বোচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম। এখানে সকাল শুরু হয় পাখির কল কাকলিতে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে এরপর পদচারনা ঘটে হাজারো শিক্ষার্থীর।

২১০০ একরের এ ক্যাম্পাসটি ১৯৬৬ সালে ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরী থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার অদূরে হাটহাজারীর ফতেহপুর ইউনিয়নে জন্ম নেয়। আর তার ঐতিহ্যের ৫৪ বছর পূর্ণ করল। ৫৫ তম বছর থেকে আরও শতবর্ষ বেঁচে থাকবে এই ক্যাম্পাস। তরুণ মেধার জন্ম আর অবকাঠামোগতভাবে সমৃদ্ধ হবে আরও বহুগুনে এমনটায় প্রত্যাশা বিশবিদ্যালয়ের বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের।বিশ্বদ্যালয়টি সকল ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। তাইতো স্বর্গপুরী সহ বহু বিশেষণে এটি বিশেষায়িত। যেখানে ভোর হয় শহর থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফেরা শাটলের হুইসেলে। আর বিশ্বের একমাত্র শাটলের ক্যাম্পাস নামেও অধিক পরিচিত চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়।

মাত্র ৮ জন শিক্ষককে নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শুরুতে চালু হয় বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি এ চার বিভাগ। এর অধীনে ছিল মাত্র ২০৪ জন শিক্ষার্থী। প্রথম উপাচার্য হিসেবে তখন দায়িত্বে ছিলেন প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান মল্লিক। বর্তমানে ৯ টি অনুষেদর অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে ৪৮টি বিভাগ ও ৭টি ইনস্টিটিউট। যাতে রয়েছে ২৩ হাজার ৫৫৪ জন শিক্ষার্থী ও ৯২৫ জন শিক্ষক। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য আছে ১৩টি আবাসিক হল ও একটি ছাত্রাবাস।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার।।এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ ও অধ্যাপনা করেছেন যার মধ্যে ১ জন নোবেল বিজয়ী এবং একাধিক একুশে পদক বিজয়ী অর্ন্তভূক্ত রয়েছেন। ২০২০ সালের হিসেবে, দেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৯ম এবং বৈশ্বিক অবস্থান ৩১০১ তম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও রয়েছে তিনটি ভিন্নধর্মী নিজস্ব জাদুঘর— যাতে দেখা মেলে দুর্লভ অনেক সংগ্রহের।

১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শাটল ট্রেন চালু হয়। বর্তমানে এটি বিশ্বের একমাত্র শাটলের ক্যাম্পাস। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন ব্যবস্থা থাকলেও, কয়েক বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ শাটল ট্রেনের রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহ্য। এর মধ্যে অন্যতম বগি চাপড়িয়ে গান গাওয়া।

শিক্ষার্থীরা শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার পথে গান তুলে মুখর করে রাখে পুরো সময়টুকু। রক-র‌্যাপের পাশাপাশি চলে জারি-সারি, ভাটিয়ালি, প্যারোডি, পাহাড়িসহ বাংলা সিনেমার ঐতিহ্যবাহী গান। তাই এসব গানকে বগিরল গান বলেই সম্বোধন করেন শিক্ষার্থীরা। এ শাটলে গান গেয়ে দেশবরেণ্য তারকার খেতাব কুঁড়িয়েছেন অনেকেই। যার মধ্যে রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী নকিব খান, পার্থ বড়ুয়া ও এস আই টুটুলেরা। বিশ্ববিদ্যালয়টি সচল থাকে শাটল ট্রেনকে ঘিরেই। শাটল বন্ধ থাকা মানে ক্যাম্পাস অচল ও নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া। এ শাটলকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সহজেই প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শাটল চলাচল বন্ধ করতে পারলেই আন্দোলন সফল হয়ে যায়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায় প্রথম শাটলটি ফেরে হাজার জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীদের নিয়ে। তখনই শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয় সবুজ ক্যাম্পাস। এভাবে একজোড়া শাটল ও একটি ডেমু একে একে রাত পর্যন্ত মোট ১৮ বার বিশ্ববিদ্যালয়ে চলাচল করে।

প্রকৃতির কোল জুড়ে গড়ে ওঠায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। যার মধ্যে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন, হ্যালিপ্যাড, ঝর্ণা, ঝুলন্ত ব্রিজ, চালন্দা গিরিপথ, জীববিজ্ঞান অনুষদ পুকুর, প্যাগোডা, ¯øুইচ গেট, ভিসি হিল, টেলি হিল, হতাশার মোড়, দোলা সরণী, ফরেস্ট্রি অন্যতম। এছাড়াও রয়েছে শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী চত্বর, নব নির্মিত জয়বাংলা ভাস্কর্য, মুক্তমঞ্চ, জারুল তলা, লাইব্রেরি চত্বর, সুনামি গার্ডেন। তবে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) না থাকায় বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি ও হল সংলগ্ন ঝুপড়ি গুলোই শিক্ষার্থীদের আড্ডার প্রধান হিসেবে স্থান পেয়েছে। ঝুপড়িতে আড্ডার পাশাপাশি চলে গ্রুপ স্টাডি, সা¤প্রতিক বিষয়াবলি নিয়ে ডিবেট, রাজনৈতিক সভা। পাশাপাশি চলে গান আর বন্ধু- প্রেমিক জুগলের খুনসুটি। জাদুঘর দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার। এটিতে রয়েছে ৪ লক্ষাধিক বইয়ের বিশাল সংগ্রহশালা। যেখানে আছে দেশ-বিদেশের দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ অনেক বই, সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা, জার্নাল ও পান্ডুলিপি রয়েছে অপ্রতুল সব প্রাচীন গ্রন্থ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সব জার্নালের প্রাচীন বিরল কপিসহ দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের ব্রেইল পদ্ধতির বই। শুরুতে গ্রন্থাগারটি মাত্র ৩০০ বই নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ৫৪ বছর পেরিয়ে আজ গ্রন্থাগারটি একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারে রূপ নিয়েছে।

তৎকালীন পাকিস্তান আমলের অনুমোদিত ক্যাম্পাসেও ছিল বীরদের পদচারণা। স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন একজন শিক্ষক, ১১জন শিক্ষার্থী সহ চবির ১৫জন ব্যক্তিবর্গ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় নানান প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে আসছে। কাটিয়ে উঠা চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যত কর্মপন্থা সম্বন্ধে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের উন্নতর ।তিনি বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে সামিল করতে বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অধিকতর মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

মায়াহরিণ, সাপ, পাখি আর বৈচিত্রপূর্ণ প্রাকৃতিক নৈস্বর্গিক শোভামণ্ডিত এই বিদ্যাপীঠ প্রথম দর্শনে সবার মনকে আকৃষ্ট করে ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে