মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা, ভোগান্তিতে ইবি ছাত্রীরা

ইবি প্রতিনিধি
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৪৪

আবাসিক হল বন্ধ রেখেই অনার্স ও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন। এদিকে আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে ছাত্রীরা। সচেতন শিক্ষকদের দাবি শুধুমাত্র পরীক্ষাদের জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে হল খোলা হোক।

জানা গেছে, ক্যাম্পাসের পাশ্ববর্তী এলাকায় মেয়েদের মেসের স্বল্পতা, খাওয়া দাওয়ার সমস্যা, নিরাপত্তার অভাবে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে মেয়ে শিক্ষার্থীরা। দুই বা তিন সিটের রুমে ৭-৮জন অবস্থানের ফলে বাড়ছে করোনাসহ বহুবিধ ভাইরাসে আক্রান্তের আশাঙ্কা। পরে পরীক্ষা শুরু হওয়া বিভাগের মেয়েরা মেস স্বল্পতার কারণে থাকার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে পরীক্ষার চিন্তার সাথে মেস খোঁজা, মেসের ভাড়াসহ নানাবিধ চিন্তা দেখা দিয়েছে মেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে।

গত ২২ ডিসেম্বর ১১৯তম একাডেমিক কাউন্সিল সভায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বিভাগের অনার্স, মাস্টার্স ও মানোন্নয়ন পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। এতে করে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকার মেসগুলোতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক শিক্ষার্থী সমাগম ঘটেছে। এসব এলাকায় ছেলেদের জন্য শতাধিক মেস থাকলেও মেয়েদের মেস রয়েছে গুটিকয়েক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাম্পাস পাশ্ববর্তী এলাকায় মোট ১৫-১৬ টি মেয়েদের মেস রয়েছে। যাতে সর্বসাকুল্যে ১৫০ জন ছাত্রী অবস্থান করতে পারে। বর্তমানে মেসগুলোতে চার শতাধিক ছাত্রী অবস্থান করছে বলেও জানা গেছে। এক্ষেত্রে একটি ৩ সিটের রুমে ৬-৭ জন মেয়ে শিক্ষার্থীকে অবস্থান করতে হচ্ছে। এতে করে করোনা সংক্রমণের আশাঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুযোগ পেয়ে মেস মালিকেরাও বেশি ভাড়া আদায় করছে বলেও জানা গেছে। এতে করে গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মেয়ে ও তার পরিবারের পক্ষে এই খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মেছগুলোতে রান্না খাওয়া, লেখাপড়ার পরিবেশসহ নিরাপত্তার অভাব রয়েছে বলেও দাবি করেছেন অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ক্যাম্পাস পাশ্ববর্তী এলাকার মেসে ছিট না পেয়ে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীই কুষ্টিয়া বা ঝিনাইদহ শহরের মেসগুলোতে অবস্থান করছে। সেক্ষেত্রে তাদের হল থেকে জিনিসপত্র ও বই নেওয়া, গাড়িতে যাওয়া আসার ঝামেলা ও মেসের বাড়তি খরচও গুনতে হচ্ছে তাদের।

ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্যাম্পাস খোলা অবস্থায় তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হলে অবস্থান করতো। এদের মধ্যে অনেকেই টিউশনি করে মাসিক খরচ চালাতো। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে টিউশনিহীন সময় কাটতে হচ্ছে তাদেরকে। এসময় হল বন্ধ থাকায় মেসের অতিরিক্ত ভাড়া ও আনুষাঙ্গিক খরচ চালানো যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদেরকে মেসে তার প্রয়োজনীয় বই, আসবাবপত্র বহন করে নিতে পোহাতে হচ্ছে বাড়তি ঝামেলা। অনেকেই গাদাগাদি ও ঘিঞ্জি পরিবেশে থেকে তাদের পড়াশোনাতে মনযোগ বসাতে পারছেন না বলেও দাবি করেছেন।

মধুমিতা ইসলাম সুমি নামের এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, “হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেয় দূরের স্টুডেন্টদের সাথে একরকম অন্যায়। যারা আমার মত হোস্টেলে বা হলে থাকতে অভ্যস্ত, মেছে কখনোই ছিলাম না, তাদের জন্য মেসে থাকা কাঁচের ছোট্ট বোতলে মাছ রাখার মত।”

সাবেকুন নাহার নামে এক শিক্ষার্থী জানান, “আমরা যারা হলে অবস্থান করে আসছিলাম তাদের জন্য মেছে থাকা কষ্টকর। এখানে সকল সুযোগ সুবিধার অভাব। টেনশনে থাকা লাগে। হলে কারেন্ট চলে গেছে কারেন্ট পাই। এখানে পরিবেশের সাথে সেট হওয়া কষ্টকর এবং খরচও বেশি যা আমাদের জন্য বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।”

এ বিষয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. সেলিনা নাছরিন বলেন, “প্রশাসক হিসেবে বলবো প্রশাসনের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা উচিত। তবে একজন অবিভাবক হিসেবে চাই অবশ্যই পরীক্ষা হল খুলে নেওয়া হোক। কারণ বাইরে থাকলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিটা আরও বেশি এবং নিরাপত্তা কম। এক্ষেত্রে হলে বাড়তি নিরাপত্তা পাওয়া যায়।”

এ বিষয়ে খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. রেবা মন্ডল বলেন, “আমি যতটুকু জানি মেয়েরা বাইরের মেছগুলোতে মানবেতর জীবন যাপন করছে। যে স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্য আমরা হল বন্ধ করে পরীক্ষা নিচ্ছি সেটা আরো বাড়ছে মেছগুলোর পরিবেশের কারণে। আমি মনে করি যাদের পরীক্ষা চলছে তাদের জন্য হলগুলো খুলে দেওয়া উচিত।”

গাদাগাদি করে মেসে অবস্থান করার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা জানতে চাইলে ইবি মেডিকেল সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসার ড. এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, “শীতকাল বা গরমকাল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের সিজনাল ভাইরাস ছড়ায়। এক্ষেত্রে ২-৩ জনের জায়গায় ৮-১০জন অবস্থানের ফলে করোনা ভাইরাস ছাড়াও বহুবিধ ভাইরাস ছড়াতে পারে।”

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে